Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

মহাদেশ পরিচিতি পর্ব ৩ - এশিয়া মহাদেশ



আয়তন - ৪,৪৫,৭৯,০০০ বর্গকিমি
জনসংখ্যা - ৪,১৬৪,২৫২,০০০ (১ম)
জনঘনত্ব - ৮৭/ বর্গকিমি
অধিবাসীদের নাম - এশিয়ান
দেশসমূহ - ৪৯ (অমীমাংশিত ৫)
সর্ববৃহৎ দেশ - চীন (৯৭,০৬,৯৬১ বর্গকিমি, পৃথিবীর ৬.১%)
সবচেয়ে ছোট দেশ - মালদ্বীপ (২৯৮ বর্গকিমি)
সর্ববৃহৎ শহর - টোকিও
ইন্টারনেট টিএলডি - (.asia)

এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ, প্রাথমিকভাবে পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এটি ভূপৃষ্ঠের ৮.৭% ও স্থলভাগের ৩০% অংশ জুড়ে অবস্থিত। আনুমানিক ৪৩০ কোটি মানুষ নিয়ে এশিয়াতে বিশ্বের ৬০% -এরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। অধিকাংশ বিশ্বের মত, আধুনিক যুগে এশিয়ার বৃদ্ধির হার উচ্চ। উদাহরণস্বরূপ, বিংশ শতাব্দীর সময়, এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে, বিশ্ব জনসংখ্যার মত।

এশিয়ার সীমানা সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত হয়, যেহেতু ইউরোপের সাথে এর কোনো স্পষ্ট ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা নেই, যা এক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের গঠন যাকে একসঙ্গে ইউরেশিয়া বলা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে সাধারণভাবে স্বীকৃত সীমানা হলো সুয়েজ খাল, ইউরাল নদী, এবং ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, এবং ককেশাস পর্বতমালা এবং কাস্পিয়ান ও কৃষসাগরের দক্ষিণে। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ইউরাল পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণসাগর এবং ভূমধ্যসাগর দ্বারা এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ দুটি পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া মহাদেশকে আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সংকীর্ণ বেরিং প্রণালী একে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। উল্লেখ্য, বেরিং প্রণালীর একদিকে অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত রাশিয়ার উলেনা এবং অপর পাশে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই প্রণালীটির সংকীর্ণতম অংশটি মাত্র ৮২ কি.মি.। চওড়া, অর্থাৎ বেরিং প্রণালীর এই অংশ হতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দূরত্ব মাত্র ৮২ কি.মি.। এর আকার এবং বৈচিত্র্যের দ্বারা, এশিয়ার ধারণা – একটি নাম ধ্রুপদী সভ্যতায় পাওয়া যায় - আসলে ভৌত ভূগোলের চেয়ে মানবীয় ভূগোলের সাথে আরো বেশি সম্পর্কিত। এশিয়ার অঞ্চল জুড়ে জাতিগোষ্ঠী, সংস্কৃতি, পরিবেশ, অর্থনীতি, ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সরকার ব্যবস্থার মাঝে ব্যাপকভাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

এশিয়ান সীমানা
এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমান্ত ঐতিহাসিকভাবে শুধুমাত্র ইউরোপীয়দের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য প্রাচীন গ্রীক দ্বারা তৈরি করা হয়। তারা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা হিসেবে এজিয়ান সাগর, দারদানেলেশ (Dardanelles), মার্মারা সাগর, বসফরাস, কৃষ্ণ সাগর, কেরচ প্রণালী (Kerch Strait), এবং আজভ সাগর ব্যবহার করে। নীল নদ প্রায়ই এশিয়া এবং আফ্রিকার মধ্যে সীমানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যদিও কিছু গ্রিক ভূগোলবিদ লোহিত সাগরকে একটি ভাল সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে। নীল নদ এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দারিউসের খাল এই ধারণায় যথেষ্ট প্রকরণ সৃষ্টি করে। রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, দন নদী কৃষ্ণ সাগরে পড়ত, যা এশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত। এটি ইউরোপীয় তীরে উত্তরদিকের নাব্য বিন্দু। ১৫ শতাব্দীতে লোহিত সাগর নীল নদের বদলে আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে সীমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে।


এশিয়া–ইউরোপ সীমানা সম্পাদনা
নদ-নদী উত্তর ইউরোপীয়দের কাছে অসন্তোষজনক হয়ে ওঠে, যখন রাশিয়ার রাজা পিটার পূর্ব খন্ডে প্রতিপক্ষ সুইডেন ও উসমানীয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন, এবং সাইবেরিয়ার উপজাতিদের সশস্ত্র প্রতিরোধ দমন করেন। এর দ্বারা ১৭২১ সালে একটি নতুন রাশিয়ান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইউরাল পর্বতমালা ও তার পরেও ব্যপ্ত ছিল। সাম্রাজ্যের প্রধান ভৌগোলিক ত্বাত্তিক আসলে ছিল একজন প্রাক্তন সুইডিশ যুদ্ধবন্দী, যাকে ১৭০৯ সালের পোল্টাভা যুদ্ধ থেকে বন্দী করা হয়। তাকে তোবলস্কে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি পিটারের সাইবেরিয়ার সরকারী, ভাসিলি তাতিসচেভ-এর সাথে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যে তাকে বইয়ের প্রস্তুতির জন্য ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করার অনুমতি ও স্বাধীনতা দেয়।


চিত্র - এশিয়া ইউরোপ বর্ডার

সুইডেনে, পিটারের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, ১৭৩০ সালে ফিলিপ জোহান ভন স্তারাহলেনবেরগ এশিয়ার সীমানা হিসেবে ইউরালকে প্রস্তাব করে একটি নতুন মানচিত্রাবলী প্রকাশ করে। রাশিয়ানরা ভূগোলে তাদের ইউরোপীয় পরিচয় রাখা অনুমোদিত করার ধারণা সম্পর্কে উৎসাহী ছিল। তাতিসচেভ ঘোষণা করেন যে, তিনি ভন স্তারাহলেনবেরগ ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীরা নিম্ন সীমা হিসাবে এমবা নদী প্রস্তাব করে। মধ্য-১৯ শতকে ইউরাল নদী প্রকাশ হবার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। কৃষ্ণ সাগরে থেকে কাস্পিয়ান সাগরে সীমানা সরানো হয়। সেই সময়কার মানচিত্রে, ট্রান্সককেশিয়া এশিয়ান বলে গণ্য হত। সেই অঞ্চলের অধিকাংশই সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ অন্তর্গত হওয়া দক্ষিণ সীমানার মতামতকে প্রভাবিত করে। ইউরোপ থেকে তাদের পৃথক কল্পিত সীমানা নির্ধারণে এশিয়ান সংস্কৃতির কোনো ভূমিকা নেই।

এশিয়া–ওশেনিয়া সীমানা সম্পাদনা
এশিয়া ও ঢিলেঢালাভাবে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল ওশেনিয়ার মধ্যকার সীমানা সাধারণত মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোনো এক খানে স্থাপন করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়া শব্দের উৎপত্তি থেকেই বিভিন্ন ভৌগোলিক অর্থ বহন করে। মালয় দ্বীপপুঞ্জের কোন দ্বীপ এশিয়ার, তার প্রধান নির্ণয়াক হলো তার উপনিবেশিক অবস্থান বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে (সব ইউরোপীয় নয়)। লুইস এবং উইগেন বলেন "তার বর্তমান গণ্ডিতে 'দক্ষিণপূর্ব এশিয়া'-র কমিয়ে আনার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

সবুজ অংশে আফ্রো-ইউরেশিয়া
ভৌগলিক এশিয়া একটি সাংস্কৃতিক বস্তু, যা বিশ্বের ইউরোপীয় ধারণা অন্যান্য সংস্কৃতির উপর আরোপিত, একটি যথাযথ নয় ধারণা যার ফলে এটার মানে নিয়ে বিবাদ হয়। এশিয়া ইউরোপ চেয়ে বড় এবং আরো সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র। এটা ঠিক বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সীমানার উপাদানসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সাধারণ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভৌগোলিক মানের উপরন্তু, এশিয়া আরো সীমাবদ্ধ আগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও কার্যক্রমে সংস্থা ভেদে নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস অব কানাডা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রশাসনিক বিভাগ ব্যবহার করে, তাদের "এশিয়া" সংজ্ঞা বৃহত্তর সংজ্ঞা থেকে যথেষ্ট ভিন্ন, এবং তা একইভাবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। "এশিয়া" কিছু বিভিন্নমুখী ব্যবহার বর্তমান ঘটনা প্রতিবেদনের সময় সংবাদ মাধ্যম দ্বারা ঘোষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি নিউজের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগ আছে, যা অস্ট্রালেশিয়া, ওশেনিয়া বা আমেরিকার প্রশান্ত অংশ (প্যাসিফিক) থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে।
হিরোডোটাস-এর সময় থেকে, এক দল ক্ষুদ্র ভূগোলবিদ তিন-মহাদেশ ব্যবস্থা (ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া) প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে তাদের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বিচ্ছেদ নেই। উদাহরণস্বরূপ, স্যার ব্যারি চুনলিফ, অক্সফোর্ডের ইউরোপীয় পুরাতত্ত্বের এমেরিটাস অধ্যাপক, যুক্তি দেন যে, ইউরোপ ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিছক "এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম বর্ধিতাংশ"। ভৌগোলিকভাবে, এশিয়া ভূখন্ডের – বা আফ্রো-ইউরেশিয়ার অংশ ইউরেশিয়ার পূর্ব অংশ, যেখানে ইউরোপ উত্তর পশ্চিমাংশের উপদ্বীপ; ভূতাত্ত্বিকভাবে, এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা (সুয়েজ খাল ছাড়া) একটি একক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড গঠন করে এবং একটি সাধারণ মহীসোপান ভাগ করে। প্রায় সব ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশির ভাগ অংশ ইউরেশীয় পাত-এর উপর অবস্থিত, দক্ষিণে আরবীয় ও ভারতীয় পাত দ্বারা সংযুক্ত এবং সাইবেরিয়ার পূর্বপ্রান্তিক অংশ উত্তর আমেরিকার পাতের উপর অবস্থিত।

চিত্র - ফুকেট

এশিয়ার ব্যুৎপত্তি
টলেমির এশিয়া
এশিয়া মূলত গ্রিক সভ্যতার একটি ধারণা। "এশিয়া", অঞ্চলের নাম, আধুনিক ভাষার বিভিন্ন আকারের মাঝে এর চূড়ান্ত উৎপত্তিস্থল অজানা। এর বুৎপত্তি এবং উৎপত্তির ভাষা অনিশ্চিত। এটা নথিভুক্ত নামগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন নামের একটি। অনেকগুলো তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। ল্যাটিন সাহিত্য থেকে ইংরেজি সাহিত্যের গঠন হওয়ার সময়কালে ইংরেজি এশিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়, তখনও একই গঠন ছিল এশিয়া। সমস্ত ব্যবহার এবং নামের গঠন রোমান সাম্রাজ্যের ল্যাটিন থেকে আহরণ করা কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।

ধ্রুপদি সভ্যতা
ল্যাটিন এশিয়া ও গ্রিক Ἀσία একই শব্দ বলে মনে করা হয়। রোমান লেখকগণ Ἀσία-র অনুবাদ এশিয়া করেছেন। রোমানরা একটি প্রদেশশের নামকরণ এশিয়া নামে করেছেন, যা প্রায় আধুনিক তুরস্কের কেন্দ্রীয় পশ্চিম অংশ। আধুনিক ইরাকে এশিয়া মাইনর ও এশিয়া মেজর অবস্থিত। নামটির প্রাচীনতম প্রমাণ গ্রিক, এটি সম্ভবত অবস্থাগতভাবে Ἀσία থেকে এশিয়া এসেছিল, কিন্তু প্রাচীন অনুবাদে, আক্ষরিক প্রসঙ্গের অভাবে, তা খুঁজে বের করা কঠিন। প্রাচীন ভূগোলবিদ এবং ঐতিহাসিকদের কাছেই জানা যায়, যেমন হিরোডোটাস, যারা সবাই গ্রিক ছিলো। রোমান সভ্যতা ব্যাপকভাবে গ্রীকের বশবর্তী ছিলো। প্রাচীন গ্রিক অবশ্যই নামের প্রাথমিক এবং সমৃদ্ধ ব্যবহারের নজির রাখে।
হেরোডোটাস এশিয়ার প্রথম মহাদেশীয় ব্যবহার করেছেন (প্রায় ৪৪০ খ্রিস্টপূর্ব), তিনি তা উদ্ভাবন করেন সেই কারণে নয়, বরং তার ইতিহাস প্রাচীনতম পাওয়া গদ্য, যা তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। তিনি সতর্কতার সাথে এটিকে সংজ্ঞায়িত করেন, পূর্ববর্তী ভূগোলবিদদের উল্লেখ করে যাদের লেখা তিনি পড়েছিলেন, কিন্তু যার কাজ এখন হারিয়ে গেছে। এর দ্বারা আনাতোলিয়া ও পারস্য সাম্রাজ্যকে বোঝান, গ্রিস ও মিশরের বিপরীতে। হেরোডোটাস আরোও বলেন, তিনি বিভ্রান্তবোধ করেন যে কেন তিন জন নারীর নামে "ভূভাগের নামকরণ করা হবে" ইউরোপা, এশিয়া, এবং লিবইয়া, আফ্রিকাকে নির্দেশ করে), অধিকাংশ গ্রিক মনে করেন দেবতা প্রমিথিউসের স্ত্রীর নামে (অর্থাৎ হেসিওয়ান, Hesione) এশিয়ার নামকরণ করা হয়, কিন্তু লিডিয়ানরা মনে করে, কট্যাসের (Cotys) ছেলে এশিজের (Asies) নামে এর নামকরণ করা হয়। গ্রিক পুরাণে, "এশিয়া" (Ἀσία) বা "এশিয়" (Asie) (Ἀσίη) নাইম্ফ বা লিডিয়ার দেবী তিতান-এর নাম।
হেরোডোটাসের ভৌগোলিক বিভ্রান্তি সম্ভবত দ্বিমত প্রকাশ করার একটি রূপ, সকল শিক্ষিত লোকের মত তিনিও যেহেতু গ্রীক কাব্য পড়েছেন, তাই তিনি ভালভাবেই বুঝে থাকবেন যে, কেন অঞ্চলগুলোর নামে নারীদের নামে হবে। এথেন্স, মাইসিন, থিবেত এবং আরো অন্যান্য স্থানগুলোর নাম নারীদের নামে ছিলো। প্রাচীন গ্রিক ধর্মে, অঞ্চলগুলো নারী দেবদূতের অধীনে ছিলো, যা অভিভাবক দেবদূতের সমান্তরাল। কবিরা তাদের কার্যকলাপ বর্ণনা করেন এবং পরের প্রজন্ম তা রূপকধর্মী ভাষায় বিনোদনের গল্পে পরিণত করে, যা পরবর্তীকালে নাট্যকাররা ধ্রুপদী গ্রিক নাটক রুপান্তরিত করে এবং "গ্রিক পুরাণ" হয়ে উঠে।
উদাহরণস্বরূপ, হেসিওড (Hesiod) তেথুস ও অকেয়ানোসের মেয়েদের কথা উল্লেখ করেন, যাদের মাঝে একটি "পবিত্র সঙ্গ" আছে, "যারা প্রভু অ্যাপোলোর সাথে এবং নদীরা তাদের তারুণ্য রেখে দিয়েছে। এদের অনেকে ভৌগলিক: ডোরিস, রোডা, ইউরোপ, এশিয়া। হেসিওড ব্যাখ্যা করেন।
"তিন হাজার ঝরঝরে-গোড়ালির মহাসাগরের কন্যা, যারা ছড়িয়ে আছে দিগদিগন্তে এবং প্রতিটি জায়গায়, একইভাবে মাটি এবং গভীর জলের সেবা করে।"
ইলিয়াড (প্রাচীন গ্রিক দ্বারা হোমার-এর উপর আরোপিত) ট্রোজান যুদ্ধে দুই ফ্রিজিয়ান (লিডিয়ায় লুভিয়ানের স্থলাভিষিক্ত গোত্র) কথা উল্লেখ করেঃ আসিউস (একটি বিশেষণ, অর্থ "এশিয়ান") এবং লিডিয়ার একটি পানিবদ্ধ জলাভূমি বা নিম্নভূমি ασιος হিসেবে।

ব্রোঞ্জ যুগ
গ্রিক কবিতার আগে, এজিয়ান সাগর গ্রিক অন্ধকার যুগে ছিলো, যার প্রারম্ভে দলমাত্রিক লেখা হারিয়ে গেছে এবং বর্ণানুক্রমিক লেখা শুরু হয়নি। এর আগে ব্রোঞ্জ যুগের নথিতে আসিরীয়া সাম্রাজ্য, হিট্টিট সাম্রাজ্য ও গ্রিসের মাইসেরিয়ান রাজ্যের কথা উল্লেখ আছে, যা নিঃসন্দেহে এশিয়া, অবশ্যই আনাতোলিয়ায়, লিডিয়া সহ যদি অভিন্ন না হয়। এসব নথি প্রশাসনিক এবং কবিতায় অন্তর্ভুক্ত নয়।
১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে অজানা অক্রমণকারী দ্বারা মাইসেরিয়ান রাজ্য ধ্বংস হয়। একদল চিন্তাবিদের মতে, একই সময়ে চলা ডরিয়ান আক্রমণ দায়ী করা হয়। প্রাসাদে পোড়ানোর ঘটনা, দৈনিক প্রশাসনিক নথির নিদর্শন গ্রিক দলমাত্রিক লিপিতে (লিনিয়ার বি) পোড়ামাটিতে লেখা আছে, যা অনেকে পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তরুণ সাংকেতিক লিপিকর মাইকেল ভেন্ট্রিস, সহায়তা করেন বিদ্বান জন চাদউইক। প্রাচীন পাইলস স্থলে কার্ল ব্লেজিন একটি উল্লেখযোগ্য গুপ্তভান্ডার আবিস্কার করেন, যাতে বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা গঠিত পুরুষ ও মহিলা নামের শত শত নমুনা অন্তর্ভুক্ত।
এর মধ্যে কিছু মহিলাকে দাসত্বে বন্দী করে রাখা হত (সমাজের গবেষণায় বিষয়বস্তু হিসাবে প্রকাশিত)। তাদের কাজে লাগানো হতো, যেমন কাপড় তৈরি, ও বাচ্চাসহ আসত। তাদের মধ্যে কিছু মহিলাদের সাথে যুক্ত বিশেষণ লাওইয়াইয়াই (lawiaiai), "বন্দী," তাদের উৎসকে নির্দেশ করে। তাদের কিছু জাতিগত নাম। বিশেষ করে, আশ্বিনি (aswiai), "এশিয়ার নারী" বলে চিহ্নিত। সম্ভবত তারা এশিয়ায় বন্দী হয়, কিন্ত অন্যান্য ক্ষেত্রে, মিলাতিয়াই (Milatiai), মিলেটাস থেকে আগত, একটি গ্রিক উপনিবেশ, যেখানে গ্রীক দ্বারা ক্রীতদাসদের জন্য অভিযান চালানো হয়নি। চাদউইক মনে করেন যে নামগুলো তাদের অবস্থান উল্লেখ করে, যেখান থেকে বিদেশি নারী কেনা হয়েছে। নামটি একবচন, আশ্বিয়া (Aswia), যা দ্বারা একটি দেশ ও তার অধিবাসী নারী উভয়কেই বোঝায়। এর একটি পুংলিঙ্গ আছে, আশ্বিওস (aswios)। এই আশ্বিয়া (Aswia) শব্দটি, হিট্টিটদের কাছে পরিচিত আশুয়া (Assuwa) নামের অঞ্চল থেকে আগত, লিডিয়ায় কেন্দ্রীভূত, বা "রোমান এশিয়া"। এই নাম, আশুয়া (Assuwa) থেকেই মহাদেশ "এশিয়া" নামের উৎপত্তি। আশুয়া লীগ পশ্চিম আনাতোলিয়ার একটি কনফেডারেশন রাজ্য, যা প্রথম তুদহালিয়ার নেতৃত্বে হিট্টিটদের কাছে প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পরাজিত হয়।
অথবা, শব্দটির উৎপত্তি আক্কাদীয় শব্দ (w)aṣû(m), যার অর্থ 'বাইরে যাওয়া' বা 'আরোহণ করা', মধ্যপ্রাচ্যে সূর্যোদয়ের সময়ে সূর্যের দিক নির্দেশ করা এবং খুব সম্ভবত ফিনিশীয় শব্দ asa এর সাথে যুক্ত যার মানে পূর্ব। বিপরীতভাবে একই রকম উৎপত্তির ধরন ইউরোপের জন্য প্রস্তাব করা হয়, আক্কাদীয় শব্দ erēbu(m) 'প্রবেশ করা' বা 'ডোবা' (সূর্য)।
টি.আর. রিড শব্দের উৎপত্তির দ্বিতীয় ধারণাটি সমর্থন করেন, asu শব্দটি থেকে প্রাচীন গ্রিক নামটি নামটি এসেছে, যার অর্থ আসিরীয়ায় 'পূর্ব' (ereb ইউরোপ-এর জন্য, অর্থ 'পশ্চিম') পাশ্চাত্য (Occidental) ধারণাটি (লাতিন রূপ Occidens 'ডুবন্ত') এবং প্রাচ্য (Oriental) (লাতিন Oriens থেকে, অর্থ 'উঠন্ত') ইউরোপীয় উদ্ভাবন, পশ্চিমা ও পূর্ব এর সমার্থক। রিড আরও জোর দেন যে, এটি এশিয়ার সমস্ত মানুষ ও সংস্কৃতিকে একক শ্রেণীবিভাগে ফেলার পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে, প্রায় যেন ইউরেশীয় মহাদেশের পশ্চিম এবং পূর্ব সভ্যতাগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের প্রয়োজন। এই বিষয়ে ওগুরা কুজকো ও তেনশিন ওকাকুরা দুই জন স্পষ্টভাষী জাপানি ব্যক্তিত্ব।

চিত্র - বালি 


ইতিহাস
এশিয়ার ইতিহাস বিভিন্ন প্রান্তিক উপকূলীয় অঞ্চলের স্বতন্ত্র ইতিহাস হিসেবে দেখা যায়ঃ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য, যা এশিয়ার মধ্য প্রান্তর দ্বারা যুক্ত।
এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতাগুলোর বিকাশস্থল, যা উর্বর নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। সভ্যতাগুলোতে মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা ও হুয়াংহো অনেক মিল রয়েছে। এই সভ্যতাগুলো প্রযুক্তি এবং ধারনা বিনিময় করতে পারে, যেমন গণিত ও চাকা। অন্যান্য উদ্ভাবন, যেমন লিখন রিতি, প্রতিটি সভ্যতায় পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে বলে মনে হয়। শহর, রাজ্য এবং সাম্রাজ্য এসব নিম্নভূমিতে বিকশিত হয়।
কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে অশ্বারোহী যাযাবর দ্বারা অধ্যুষিত ছিল, যারা কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এশিয়ার সব অঞ্চল পৌঁছাতে পারতো। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে প্রাচীনতম বংশের বিস্তার হলো ইন্দো-ইউরোপীয়, যারা তাদের ভাষা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলো। এশিয়ার উত্তরদিকের শেষ সীমায় অবস্থিত সাইবেরিয়া প্রান্তীয় যাযাবরদের জন্য দুর্গম ছিলো মূলত ঘন বন, জলবায়ু এবং তুন্দ্রার জন্য। এই এলাকা খুব জনবিরল ছিল।
মধ্য এবং প্রান্তীয় অঞ্চল অধিকাংশই পর্বত ও মরুভূমি দ্বারা পৃথক ছিল। ককেশাস, হিমালয় পর্বতমালা ও কারাকোরাম, গোবি মরুভূমি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, যা প্রান্তীয় অশ্বারোহী কেবল পার হতে পারে। যখন শহুরে নগরবাসী আরো উন্নত ছিলো প্রযুক্তিগতভাবে ও সামাজিকভাবে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রান্তীয় অশ্বারোহীর আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক ভাবে সামান্যই করতে পারতো। যাইহোক, এসব নিম্নভূমিতে যথেষ্ট উন্মুক্ত তৃণভূমি নেই যা বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর যোগান দিতে পারবে; এই এবং অন্যান্য কারণে, যাযাবরেরা চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ জয় করে তাদের স্থানীয় সমৃদ্ধিশালী সমাজে মিশে যেতে পেরেছিলো।
৭ম শতকে মুসলিম বিজয় চলাকালে, ইসলামিক খিলাফত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া জয় করে। পরবর্তিতে ১৩শ শতকে মোঙ্গল সাম্রাজ্য এশিয়ার অনেক বড় অংশ জয় করে, যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। মোঙ্গল আক্রমণ করার আগে, চীন এ প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ছিল; আক্রমণের পরবর্তি আদমশুমারিতে ১৩০০ সালে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ ছিল।
ব্ল্যাক ডেথ, পৃথিবীব্যাপী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী মৃত্যু, মধ্য এশিয়ার অনুর্বর সমভূমিতে উদ্ভব হয়ে এটা সিল্ক রোড বরাবর চলে গেছে।
রাশিয়ান সাম্রাজ্য ১৭শ শতক থেকে এশিয়া বিস্তৃত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ সাইবেরিয়া এবং অধিকাংশ মধ্য এশিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৬শ শতক থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্য আনাতোলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ১৭শ শতকে, মাঞ্চুরা চীন জয় করে এবং চিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে ১৬শ শতক থেকে ইসলামী মুঘল সাম্রাজ্য অধিকাংশ ভারত শাসন করতে থাকে।

চিত্র - চিয়াংমাই

ভূগোল ও জলবায়ু
এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ। এটা পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের ৮.৮% ভাগ (বা ৩০% ভাগ স্থল), এবং বৃহত্তম তটরেখা ৬২,৮০০ কিলোমিটার। এশিয়া সাধারণত ইউরেশিয়ার পাঁচ ভাগের চার ভাগ নিয়ে পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটা সুয়েজ খাল ও ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, ককেশাস পর্বতমালা, কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে অবস্থিত। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এশিয়া মহাদেশে ৪৮টি দেশ আছে, তাদের দুটি (রাশিয়া ও তুরস্ক) দেশের ইউরোপে অংশ আছে।
এশিয়ার অত্যন্ত বিচিত্র জলবায়ু এবং ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য আছে। জলবায়ুর পরিধি আর্কটিক, উপআর্কটিক (সাইবেরিয়া) থেকে দক্ষিণ ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় অবধি বিস্তৃত। এর দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে আর্দ্র ও অভ্যন্তরে শুষ্ক। পশ্চিম এশিয়ায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দৈনিক তাপমাত্রা পরিসর দেখা যায়।হিমালয় পর্বমালার কারণে মৌসুমি সঞ্চালন দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ জুড়ে প্রাধান্য পায়। মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ উষ্ণ। উত্তর গোলার্ধের মধ্যে সাইবেরিয়া অন্যতম শীতলতম অঞ্চল, এবং উত্তর আমেরিকা জন্য আর্কটিক বায়ুভরের একটি উৎস হিসাবে কাজ করে। ট্রপিকাল সাইক্লোনের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে সক্রিয় জায়গা উত্তরপূর্বে ফিলিপাইন ও দক্ষিণ জাপান। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি ও আরব মরুভূমি মধ্যপ্রাচ্যের অনেকটা জুড়ে প্রসারিত। চীনের ইয়ানজে নদী মহাদেশের দীর্ঘতম নদী। নেপাল ও চীনের মধ্যকার হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পর্বতশ্রেণী। বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রসারিত ও সরলবর্গীয়, পর্ণমোচী বনাঞ্চল উত্তরে প্রসারিত।
ম্যাপলক্রফট, বৈশ্বিক ঝুঁকি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান, ২০১০ সালে সম্পাদিত একটি জরিপ ১৬টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। প্রত্যেক জাতির ঝুঁকি ৪২টি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত সূচক দ্বারা নির্ণিত, যা পরবর্তী ৩০ বছর সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে। এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা, ১৬টি দেশের মধ্যে ছিল যারা জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। কিছু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ক্রান্তীয় অংশে আধা-শুষ্ক জলবায়ুতে, তাপমাত্রা ১৯০১ থেকে ২০০৩-এর মধ্যে ০.৪ °সে বেড়েছে। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সেমি-এ্যারিড ট্রপিক্স (ICRISAT) দ্বারা একটি গবেষণায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এশিয়ার কৃষি ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক পন্থা ও কৌশল খোঁজার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, যার ফলে দরিদ্র ও অসহায় কৃষকদের উপকার হবে। গবেষণায় সুপারিশ করা হয় স্থানীয় পরিকল্পনার মধ্যে জলবায়ু তথ্য ব্যবহারের উন্নতি এবং আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা শক্তিশালীকরণ, গ্রামীণ পরিবারের আয়ের বহুমুখীকরণ উৎসাহী করা, উন্নত প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ তথা ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পূর্ণ করা, বন আচ্ছাদন করা, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান।

এশিয়ান অর্থনীতি
সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্য কেন্দ্র।
জিডিপি (PPP, 2014)ঃ
গণচীন--১৮,০৮৮,০৫৪২ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
ভারত--৭,৪১১,০৯৩৩ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
জাপান--৪,৭৬৭,১৫৭৫ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
ইন্দোনেশিয়া--২,৬৮৫,৮৯৩৬ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
দক্ষিণ কোরিয়া--১,৭৮৩,৯৫০৭ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
সৌদি আরব--১,৬০৯,৬২৮৮ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
তুরস্ক--১,৫১৪,৮৫৯৯ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
ইরান--১,৩৫৭,০২৮১০ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)
তাইওয়ান--১,০৭৮,৭৯২ (মিলিয়ন অফ ইউএসডি)

চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং

এশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম নমিনাল জিডিপি সব মহাদেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের পরে, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা সমতায় বৃহত্তম। ২০১১ সালের হিসাবে, এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক অফিস অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ২০১১-এ, অফিসে অবস্থানে এশিয়ার আধিপত্য ছিল, শীর্ষ ৫-এ ৪টিই এশিয়ার হংকং, সিঙ্গাপুর, টোকিও, সিওল ও সাংহাই। প্রায় ৬৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থার হংকং-এ অফিস আছে।

১৯৯০ দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর শুরুতে, চীনের অর্থনীতি এবং ভারতের অর্থনীতি দ্রুত হারে বাড়ছে, উভয়ের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% এর বেশি।

এশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক খুব উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশগুলোঃ ইসরায়েল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান, সাইপ্রাস ও ফিলিপাইন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন এবং ওমান।

অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস মাড্ডিসন তার বই দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি: এ মিলেনিয়াম পারর্স্পেক্টিভ-এ উল্লেখ করেন, ভারত ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ও ০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল।চীন পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক সময়ের জন্য বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতি ছিল, মধ্য ১৯ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (ব্রিটিশ ভারত বাদে) দখল করা আগ পর্যন্ত।

বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কয়েক দশক ধরে, জাপান এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পৃথিবীর যেকোন একক জাতির দ্বিতীয় বৃহত্তম, ১৯৮৬-তে সোভিয়েত ইউনিয়নকে অতিক্রম করার পরে (নেট বস্তুগত পণ্য পরিমাপে) এবং ১৯৬৮-তে জার্মানিকে। (বিশেষ দ্রষ্টব্য: কিছু অতিপ্রাকৃত অর্থনীতি বৃহত্তম, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) অথবা এপেক)। এটা ২০১০-এ শেষ হয় যখন চীন জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হয়। ১৯৮০ দশকের শেষভাগ ও ১৯৯০ দশকে শুরুতে, জাপানের জিডিপি শুধুমাত্র (বর্তমান বিনিময় হার পদ্ধতি), বাকি দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির সমান ছিলো। ১৯৯৫ সালে জাপানের অর্থনীতি, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান হয়ে গেছিলো এক দিনের জন্য, জাপানি মুদ্রা পরে ৭৯ ইয়েন/মার্কিন ডলার উচ্চ রেকর্ডে পৌঁছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত, এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জাপান কেন্দ্রীভূত ছিলো, এছাড়াও প্রশান্ত রিমের চারটি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিলো, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুর। এই চারটি অঞ্চল এশিয়ান টাইগার্স পরিচিত, যারা সকলে উন্নত দেশ এবং এশিয়ার মাথাপিছু সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জনকারী।

চিত্র - সিংগাপুর

পূর্বানুমান অনুসারে, ২০২০ সালে ভারত নমিনাল জিডিপিতে জাপানকে অতিক্রম করবে। গোল্ডম্যান শ্যাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। বিভিন্ন বাণিজ্য ব্লক আছে, যার মাঝে আসিয়ান সবচেয়ে উন্নত।

এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ এবং এটা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ যেমন পেট্রোলিয়াম, বন, মৎস্য, পানি, তামা ও রূপা। এশিয়ায় উৎপাদন, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারত, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুজাতিক কর্পোরেশনের আধিপত্য আছে, কিন্তু চীন ও ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে বহু কোম্পানি সস্তা শ্রমের প্রচুর যোগান এবং তুলনামূলকভাবে উন্নত অবকাঠামোর সুযোগ গ্রহণ করে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সিটিগ্রুপ অনুসারে, ১১-র মধ্যে ৯ টি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি উত্পাদক দেশ এশিয়ার, জনসংখ্যা এবং আয় বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। তারা হলো বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম। এশিয়ার চারটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র আছেঃ টোকিও, হংকং, সিঙ্গাপুর ও সাংহাই। কল সেন্টার ও ব্যবসা প্রসেস আউটসোর্সিং (BPOs) ভারত ও ফিলিপাইনে প্রধান নিয়োগকারী হয়ে উঠছে, অত্যন্ত দক্ষ, ইংরেজি ভাষাভাষী কর্মীর সহজলভ্যতার কারণে। আউটসোর্সিং বর্ধিত ব্যবহারের কারণে আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে ভারত ও চীনের উত্থানকে সহায়তা করে। বড় এবং প্রতিযোগিতামূলক তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের কারণে, ভারত আউটসোর্সিং জন্য প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

২০১০ সালে, এশিয়ায় ৩৩ লক্ষ মিলিওনেয়ার ছিল (বাড়ি ব্যতীত মার্কিন ১ মিলিয়ন ডলার বেশি আয়করা মানুষ), উত্তর আমেরিকার সামাণ্য নিচে ৩৪ লক্ষ মিলিওনেয়ার। গত বছর এশিয়া ইউরোপকে অতিক্রম করে। সম্পদ প্রতিবেদন ২০১২-এ সিটি গ্রুপ উল্লেখ করে যে এশীয় সেন্তা-মিলিওনেয়ার উত্তর আমেরিকার সম্পদ কব্জা করে প্রথমবারের মত, তা পূর্বে পাঠানো অব্যাহত থাকে। ২০১১-এর শেষ নাগাদ, ১৮,০০০ এশীয় মানুষ বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীন ও জাপানের যাদের কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিষ্পত্তিযোগ্য সম্পদ, যখন উত্তর আমেরিকায় তা ১৭,০০০ জন এবং পশ্চিম ইউরোপে ১৪,০০ জন।

পর্যটন
সমগ্র বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এশিয়া এর দেশগুলোর একটা বিশেষ কদর আছে। একঘেয়েমি শীত প্রধান অথবা শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত পশ্চিমা নাগরিকরা তাই এশিয়া এর উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ার ছোঁয়া পেতে দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসতে মোটেও দ্বিধা করে না। এখানকার আবহাওয়া, মানুষ জন এবং সংস্কৃতি সবই যেন তাদের কাছে নতুনত্ব বয়ে নিয়ে আসে। পশ্চিমারা সাধারণত এশিয়া তে আসে একটু উষ্ণ এবং মসলাদার স্বাদ পাবার জন্যে, সেটা পরিবেশ, মানুষ, প্রকৃতি বা খাবার যাই হোক না কেন। এশিয়া তাদের কখনই নিরাশ করেনি। এশিয়া তাঁর সীমাহীন বৈচিত্র্য দিয়ে বারবার পশ্চিমাদের মন জয় করে নিয়েছেন।


বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা ইউ এস নিউজ সম্প্রতি পর্যটকদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে কাছে এশিয়া এর সবচাইতে জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা থেকে জনপ্রিয় কয়েকটি দেশ - 

  • হংকং
  • মালদ্বীপ
  • টোকিও
  • ফুকেট
  • বালি
  • চিয়াংমাই
  • সিংগাপুর 


চিত্র - হংকং


জনমিতি
এশিয়ার জনমিতি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয় তথ্য প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়া সার্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) পৃথিবীর যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশি উন্নতি সাধন করে, যা গত ৪০ বছরে দ্বিগুণ হয়।
চীন, এইচডিআই উন্নতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্জনকারী ১৯৭০ সাল থেকে, "টপ টেন মুভার্স" তালিকার একমাত্র দেশ যা স্বাস্থ্য বা শিক্ষার সফলতা জন্য নয় আয়ের কারণে। শেষ চার দশকে এর মাথাপিছু আয় অত্যাশ্চর্য ২১ গুণ বেড়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ের দারিদ্যতা থেকে মুক্তি দেয়। তবুও এটা স্কুল তালিকাভুক্তি এবং প্রত্যাশিত আয়ুতে অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় নয়।

নেপাল, একটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ, প্রধানত কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের দ্রুততম অগ্রসরমান। এর বর্তমান প্রত্যাশিত আয়ু ১৯৭০ সালের তুলনায় ২৫ বছর বেশি। নেপালে প্রতি পাঁচ জন শিশুদের মধ্যে চার জনের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, যা ৪০ বছর আগে ১ জন ছিলো।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মানব উন্নয়ন সূচকে সর্বোত্তম (১১ ও ১২ নং, যা "খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন" বিভাগে পড়ে), অনুসরণ করে হংকং (২১) ও সিঙ্গাপুর (২১)। আফগানিস্তান (১৫৫) মূল্যায়ন ১৬৯টি দেশ থেকে, যা এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্থান।

এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

• পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশই এশিয়ার অন্তর্গত।
• এশিয়ার বৃহত্তম মরুভূমি- গোবি মরুভূমি।
• এশিয়ার বৃহত্তম সাগর- চীন সাগর।
• এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ- কাম্পিয়ান।
• এশিয়ার দীর্ঘতম নদী- ইয়াংসিকিয়াং (চীন)
• সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ- মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৪.৪৬ মি.)
• এশিয়া মহাদেশের উত্তর আমেরিকা থেকে পৃথক হয়েছে- বেরিং প্রণালী দ্বারা।
• আফ্রিকা মহাদেশ পৃথক হয়েছে- লোহিত ও সুয়েজখাল দ্বারা।
• এশিয়া ইউরোপ হতে পৃথক করেছে- বসফরাস প্রণালী।
• এশিয়া এবং ইউরোপকে একত্রে বলা হয়- ইউরোশিয়া।
• তুরস্ক দেশটি ইউরোপ এবং এশিয়ার মাঝে অবস্থিত।
• এশিয়ার সর্বউত্তরের বিন্দু- চেলুসিকিনের অগ্রভাগ।
• একদেশ দুই নীতি কার্যকর- চীনে।
• ফালুগং যে দেশের নিষিদ্ধ সংগঠন- চীন।

সূত্রসমূহ - 
1. National Geographic Family Reference Atlas of the World. Washington, DC: National Geographic Society (U.S.). 2006.
2. National Geographic Atlas of the World (7th ed.). Washington, D.C.: National Geographic. 1999.
3. Asia – Origin and meaning of Asia by Online Etymology Dictionary
4. Henry George Liddell; Robert Scott; Henry Stuart Jones; Roderick McKenzie (2007)
5. History – Black Death, BBC. 17 February 2011
6. Ventris, Michael; Chadwick, John (1973)
7. Bangladesh Protidin
8. Wikipedia

লেখক -
শাহারিয়ার আহমেদ
৩য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন 


Comments