বিভাগ - খুলনা
আয়তন - ৭১৬.০৮ বর্গ কিমি
সীমানা - উত্তরে কুষ্টিয়া জেলা ও পশ্চিমবঙ্গ (ভারত), দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা ও পশ্চিমবঙ্গ (ভারত), পূর্বে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলা, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ (ভারত)
জনসংখ্যা - ৫৯১৪৩৬; (পুরুষ ৩০৩১৬৬, মহিলা ২৮৮২৭০। মুসলিম ৫৭৬৯৬২, হিন্দু ৬৭৭৯, বৌদ্ধ ৭৩৮৯, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ২৮৫)
সাক্ষরতার হার - ৪৬.৩ %
সংসদীয় আসন - ২ টি
পোস্ট কোড - ৭১০০
নামকরণ
মেহেরপুর নামকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে উল্লেখ্য, পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের বাংলায় ভ্রমণ গ্রন্থে বিখ্যাত বচনকার মিহির ও তাঁর নিজের পুত্রবধু খনা (খনার বচন বিখ্যাত) ভৈরব নদীর তীরস্থ এ অঞ্চলে বাস করতেন। তার নামানুসারে প্রথমে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশে মেহেরপুর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
জেলার ঐতিহ্য
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের ছোট্ট একটি জেলা মেহেরপুর। এ জেলার রয়েছে প্রায় দু’হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশেষত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঘটনায় মেহেরপুরের মুজিবনগর সূতিকাগারের ভূমিকা পালন করায় এ জেলার ইতিহাস হয়েছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। সেই মুজিবনগরের স্মৃতি বিজড়িত মেহেরপুর বাংলাদেশের জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলের গড়ে উঠেছে নানান স্থাপনা; তারই উল্লেখযোগ্য কয়েকটির কথা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
(1) মুজিবনগর স্মৃতিকমপ্লেক্সঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর প্রাক্কালে মেহেরপুর জেলার তৎকালীন বৈদ্যনাথতলা (বর্তমানে মুজিবনগর) নামক স্থানে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এখানে আছে -
- বঙ্গবন্ধু তোরণ,
- অডিটোরিয়াম,
- শেখ হাসিনা মঞ্চ,
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকেন্দ্র,
- মসজিদ,
- হেলিপ্যাড,
- ২৩টি কংক্রিটের ত্রিকোণ দেয়ালের সমন্বয়ে উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতিকে প্রতীক করে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ,
- প্রশাসনিক ভবন,
- টেনিস মাঠ,
- পর্যটন মোটেল,
- স্বাধীনতা মাঠ,
- স্বাধীনতা পাঠাগার,
- বিশ্রামাগার,
- পোস্ট অফিস,
- টেলিফোন এক্সচেঞ্জ,
- শিশুপল্লী,
- ডরমেটরি ও
- মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র।
কমপ্লেক্সের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ভাস্কর্য। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া সম্মেলন, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, পাকবাহিনীর আত্নসমর্পণ, রাজাকার-আলবদর এর সহযোগিতায় বাঙালি নারী-পুরুষের ওপর পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনসহ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
(2) ভবানন্দপুর মন্দিরঃ মেহেরপুর জেলার প্রত্ন নিদর্শনগুলোর অন্যতম সদর থানার ভবানন্দপুর গ্রামে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরটি। মন্দিরটির স্থাপত্য শৈলী দেখে অনেকে এটিকে বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে অনুমান করে থাকেন। কিন্তু এটি হিন্দু মন্দির।
(3) আমদহ গ্রামের স্থাপত্য নিদর্শনঃ মেহেরপুর জেলার অত্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন মেহেরপুর শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত আমদহ গ্রামের স্থাপত্য কীর্তি। আমদহ গ্রামের এই স্থাপত্য শৈলীর ধ্বংসাবশেষকে রাজা গোয়ালা চৌধুরীর সাথে বগা দস্যুদের যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত আবাসস্থল বলে মাসিক পত্রিকা সাধক এর ১৩২০ (১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা) সংখ্যায় উলেখ করা হয়েছে। প্রায় এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্রত্নস্থানের চারিদিকে ছিল পরীখা, কিন্তু পরিখার বেষ্টনীতে কোন প্রাচীর ছিলনা। এখন এই প্রত্নস্থানের কোন চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় না। তবে এখানকার মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা একটি প্রত্মস্তম্ভ পুরাতন জেলা প্রশাসক ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে।
(4)বলরাম হাড়ি মন্দিরঃ ১৮ শতকের শেষের দিকে মেহেরপুর শহরের মালোপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলরাম হাড়ি নামের এক আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি ‘উপাস’ নামে একটি ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করেন যার অনুসারীরা বলরামী সম্প্রদায় নামে পরিচিত। ১৮ শতকের শেষের দিকে বা ১৯ শতকের গোড়ার দিকে এ ধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ হয়। ১৮৫০ সালে ৬৫ বছর বয়সে বলরাম হাড়ি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে সমাহিত করা হয়। মেহেরপুরের জমিদার জীবন মুখার্জি এ সাধকের স্মৃতি রক্ষার্থে ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। এ জমির ওপর নির্মাণ করা হয় বলরাম হাড়ির সমাধি মন্দির।
![]() |
| আমঝুপি নীলকুঠি |
(5)আমঝুপি নীলকুঠিঃ নীল চাষ ও নীলকরদের দীর্ঘ ইতিহাস মেহেরপুর বুকে জড়িয়ে রেখেছে। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত জন ফিলিপস্- এর নীলচাষ বিষয়ে রচিত গ্রন্থে বলা হয়েছে যে মশিয়ে লুই বান্নো বা বোনার্দ নামক জনৈক ফরাসী ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রথম নীল চাষ শুরু করেছিলেন। আমঝুপি নীলকুঠি ১৮১৫ সাল অথবা এরও কিছুকাল পরে স্থাপিত হয়েছে। ভাটপাড়ার নীলকুঠি, সাহারবাটিঃ ১৮৫৯ সালে স্থাপিত ধ্বংস প্রায় এই নীলকুঠিটি ইট, চুন-শুরকি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এর ছাদ লোহার বীম ও ইটের টালি দিয়ে তৈরী। এই কুঠির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী।
(6)স্বামী নিগমানন্দ আশ্রমঃ মেহেরপুর জেলার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হচ্ছে স্বামী নিগমানন্দ আশ্রম। হিন্দুধর্মের মহান সংস্কারক নিগমানন্দ সরস্বতীর জন্ম ১২৮৭ বঙ্গাব্দে রাধা গোবিন্দপুর গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস মেহেরপুরের কুতুবপুর গ্রামে। শ্রীচৈতন্য ও শংকরের দর্শনের সমম্বয়ে এক নতুন ধর্মমত প্রতিষ্ঠাকরেন। স্বামী নিগমানন্দ গৃহী হয়েও ছিলেন সন্ন্যাসী ও মানবের প্রেমে ব্যাকুল এক সাত্ত্বিক পুরুষ। ১৮ শতকের দিকে মেহেরপুর শহরে রাজা গোয়ালা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত করেন আটচালা শিবমন্দির। মন্দিরটি বর্তমানে নিগমানন্দ সরস্বতী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত সরস্বতী আশ্রম হিসেবে কাজ করছে।
(7) বল্লভপুর চার্চ, ভবের পাড়াঃ ১৯২৪ সালে ভবেরপাড়ায় রোমান ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ আমলে নির্মিত বল্লভপুর চার্চ, ভবেরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর নির্মাণশৈলীতে পাশ্চাত্য রীতি অনুসরণ করা হয়নি। এতে দেশীয় স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়। তবে প্রযুক্তি ও স্টাইলে ইউরোপীয় স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব ছিল।
(8) শেখ ফরিদের দরগাহঃ মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ গ্রাম হল বাগোয়ান। ইতিহাসহেতা ড. ইরফান হাবিরের লেখায়, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর এর অন্নদা মঙ্গল কাব্যে ‘ক্ষীতীশ বংশাবালি চরিতাং’ গ্রন্থে এ গ্রামের কথা বলা হয়েছে। এ গ্রামে দরবেশ খান জাহান আলীর সম সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ ফরিদের দরগাহ।
(9) সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরঃ মেহেরপুর শহরের বড় বাজারে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরটিকে স্থানীয় হিন্দুরা জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে গণ্য করে। জেলার সর্ব প্রাচীন এই মন্দিরটি ইতিহাসের কোন সোনালী অধ্যায়ে স্থাপিত হয়েছে তা জানা যায় না। তবে অনুমান করা হয় রাজা গোয়ালা চৌধুরী কিংবা তার পরবর্তী বংশধরেরা যশ প্রতিপত্তি বৃদ্ধির প্রত্যাশায় এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু মন্দিরের দেওয়ালে উৎকীর্ন রয়েছে বাংলা ১৩৩২ সনে প্রফাত গোপাল সাহার স্ত্রী পাচু বালা দাসী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বালা দেবীর বিগ্রহ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী তাদের দোসররা এই মন্দির আক্রমণ করে এবং এর অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত বালী মূর্তিটি গুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর স্থানীয় হিন্দুরা পুনরায় বিগ্রহ স্থাপন করে এবং নিয়মিত পূজা অর্চনা শুরু হয়। প্রতি বছরই এখানে কালী পূজা, দূর্গাপুজা, সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখ মাসের শেষ সংক্রান্তিতে এই মন্দিরকে ঘিরে বসে বৈশাখ সংক্রান্তির মেলা। সংক্রান্তির মেলার জৌলুস আজ আর নেই; তবে নিজ ও সমাজের মঙ্গল কামনায় প্রতিবছর মন্দির প্রাঙ্গনে চলে পাঠা বলিদান।
(10)মেহেরপুর পৌর কবর স্থানঃ বহু বছর পূর্ব থেকে মৃতদেহ সমাহিত করার জন্য মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত হয় পৌর গোরস্থান।পূর্বে পৌর গোরস্থান অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। উক্ত প্রাচীর কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেলে ১৯৯৩ সালে পৌর মেয়র, জনাব মোঃ মোতাছিম বিল্লাহ মতু পৌর মেয়রের আসন অলংকৃত করার পর পৌর পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় সুদর্শন প্রাচীর নির্মাণসহ প্রাচীরের গায়ে টাইলস্ ও পাথরের উপর আরবী এবং বাংলা কোরআন, হাদীসের বাণী লিখেন। এছাড়া এ কবরস্থানের সমস্ত জায়গায় ফুলের বাগান দ্বারা সজ্জিতকরণসহ কবর স্থানের মধ্যে ওজুখানা ও মসজিদ নির্মাণ করেন।
(11) মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধঃ ১৯৭১ সালে যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যাঁরা পাকিস্থানি সৈনিকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানের পাশে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে মাল্যদান করে তাঁদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
মেহেরপুর জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
ক্রম নাম জন্মতারিখ ও জন্মস্থান মৃত্যুতারিখ কোনবিষয়ে বিখ্যাত, জীবন, পুরস্কার/খেতাব
(০১ )আজাদ শাহ ৯ পৌষ ১৩২২ নদীয়া জেলার তেহট্ট থানার হরিপুর ১০ ভাদ্র, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ মরমী সাধক ও চারণ কবি, ধর্ম, দর্শন, বৈষ্ণব সাহিত্য, জন্মান্তরবাদ, শরিয়ত, মারফত বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি চারশত গান ও পদাবলী রচনা করেন।
(০২) আ.ক.ম. ইদ্রীস আলী - ২৮ মার্চ, ২০০০ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও মুজিবনগর ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
(০৩) সাধক আতাহার সাহ ১৯৪৬খ্রিঃ নদীয়া জেলার হাতিছালা গ্রামে ১৯৯৯খ্রিঃ তিনি একজন মরমী সাধক এবং পেশাগত জীবনে তিনি একজন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
(০৪) আব্দুল মান্নান ৭অক্টোবর, ১৯৪২ - তিনি একজন শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ। তিনি সোভিয়েত রাশিয়া থেকে সমবায়ের উপর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকাপালন করেছেন।
(০৫) ড. আবদূর রশিদ ১জানুযারি, ১৯৬০ গাংনী উপজেলার সাহারবাটী গ্রামে - তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসীতে ১ম শ্রেণীতে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে ব্রিটেন থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করে। পেশাগত জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের ডীন হিসেবে কর্মরত আছেন।
(০৬) আরজান সাহ - - তিনি একজন মরমী সাধক ছিলেন। তিনি লালন শাহের উত্তরসূরী হিসেবে অনেক গানে সুর দিয়েছেন। বিভিন্ন সাহিত্যেতাঁর জ্ঞান ছিল অসাধারণ। তিনি একজন পদাবলী রচয়ীতা। ১৯৮৬ সালে ‘‘আরজান সাহপদাবলী’’ নামে তার লেখা প্রকাশপেয়েছে।
(০৭) কিরণ কুমার বোস - ২৫মার্চ, ১৯৭১ তিনি একজন লেখক ছিলেন। তিনি ‘‘দস্যু ডাঃ হুইপ’’ গ্রন্থের রচয়ীতা।
(০৮) প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া ১০ অক্টোবর, ১৯৪০ - তিনি একজন নাট্য অভিনেতা। তিনি বাংলাদেশ চলচিত্রেও অনেক অবদান রেখেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।
(০৯) মীর মোজাফ্ফর আলী - ১৮অক্টোবর, ১৯৯১ তিনি জাতীয় পর্যায়ের একজন সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। সঙ্গীত ভূবনে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত বিভাগের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
(১০) মোহাম্মদ সহিউদ্দিন - ২১মার্চ, ১৯৯০ তিনি ছিলেন বিনম্র ব্যক্তিত্বের একজন রাজনীতিবিদ। ১৯৭৫ সালে মেহেরপুর জেলার গভর্নর নিযুক্তহন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ (মেহেরপুর-১) আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
(১১) ডক্টর গোলাম কিবরিয়া ৯ নভেম্বর, ১৯৪৪ মেহেরপুর জেলার দারিয়াপুর গ্রামে ১০নভেম্বর, ১৯৮৫ তিনি একজন অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৬৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স লাভ করেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া নিউক্যাসেল ইউনিভারসিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রীলাভ করেন।
(১২) ভবানন্দ মজুমদার - - তিনি নদীয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাদশাহ আকবর প্রদত্ত ফরমানে রাজত্ব লাভ করে নদীয়ায় রাজধানী স্থাপন করেন।
(১৩) বলরাম হাড়ীঁ - ৩১অগ্রহায়ণ ১২৫৭ বঙ্গাব্দ তিনি হাড়ীঁ সম্প্রদায়ের প্রবক্তা ও প্রখ্যাত মরমী সাধক। তিনি বৌদ্ধ ধর্মানুযায়ী আধ্যাত্নিক জ্ঞান অর্জন করে মেহেরপুর মালোপাড়ায় ধর্ম প্রচারে নিজেকে ব্রত করেন।
(১৪) নুরুল হক ১জানুয়ারি, ১৯১৫গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে ২৭আগস্ট ১৯৯৮ তিনি একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিও করতেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন ইন চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিরল প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী নুরুল হক ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করেন। ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।
(১৫) ড. মোঃ মোজাম্মেল হক ৩মার্চ ১৯৩৯ মেহেরপুর জেলার রাইপুর গ্রামে - তিনি একজন পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। ১৯৬১ সালে এমএসসি ডিগ্রী লাভের পর ১৯৬৭ সালে ইল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
(১৬) মোঃ শাহ আলম - ২৯মে, ১৯৯০ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সেনা সদস্য ছিলেন। সাফ গেমসের ইতিহাসে স্বর্ণপদক লাভ করে তিনি দুবার দ্রুততম মানবহবার গৌরব অর্জন করেন। তিনি মস্কো অলিম্পিক এ্যাথলেটিক্সে ৫ম, সিউল অলিম্পিকে ৭ম এবং কমনওয়েলথ গেমসে ৯ম স্থান অধিকার করেন।
(১৭) অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন (দোদুল) মেহেরপুর জেলার সদরে - তিনি একজন রাজনীতিবিদ। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ মেহেরপুর-১ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ (মেহেরপুর-১) আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত মোহাম্মদ সহিউদ্দিনের সুযোগ্য পুত্র।তিনি ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।
(১৮) আশরাফ মাহমুদ গাংনী উপজেলার তেতুঁলবাড়ীয়া গ্রামে ৩০ এপ্রিল, ১৯৬৮ - আশরাফ মাহমুদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ,জাতীয় বেতার ভবনের বিশেষ শ্রেণীর সংগীত শিল্পী। তিনি বিভিন্ন বেসরকারী চ্যানেলে দীর্ঘ দিন যাবৎ সুনামের সাথে সংগীত পরিবেশন করে আসছেন। "বিটিভি"র সংগীত পরিচালক। বঙ্গভবন, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র, জাতীয় যাদুঘরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে সংগীত পরিবেশন করে আসছেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে সংগীতে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি
১৯৭১ সালের ৩০ ও ৩১ মার্চ গাঙ্গনী উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে আনসার মুজাহিদ এবং সাধারণ জনগনের লড়াইয়ে আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পাকবাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর উপজেলায় (পূর্ব নাম: ভবেরপাড়া বৈদ্যনাথতলা) স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম এন এ। একই দিনে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পাকবাহিনী মেহেরপুর শহরের আমঝুপিতে ৮ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
বধ্যভূমি ১ (মেহেরপুর কলেজের পেছনে); গণকবর ২ (কাজীপুর ও টেপুখালির মাঠ); স্মৃতিস্তম্ভ ১: মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।
শিক্ষার হার
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৮%; পুরুষ ৩৯.৯%, মহিলা ৩৫.৬%।
কলেজ ৭, ভকেশনাল ইনস্টিটিউট ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০, মাদ্রাসা ১১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস
কৃষি ৬৮.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৪%, শিল্প ০.৮৭%, ব্যবসা ১৩.৮৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২১%, নির্মাণ ১.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, চাকরি ৩.৮১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৯% এবং অন্যান্য ৫.৩৩%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক
আযম; সাপ্তাহিক: পরিচয় (১৯৮৫), চুম্বক (১৯৮৬); পাক্ষিক: পশ্চিমাঞ্চল; মাসিক: সাধক (১৯১৩), পল্লী শ্রী (১৯৩৫), সীমান্ত (১৯৬২), প্রবাহ (১৯৭৯); সাময়িকী: বসুমতি, নন্দনকানন; বুলেটিন: রক্তস্বাক্ষর (অনিয়মিত), আগামী (অনিয়মিত); অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক: মুজিবনগর (১৯৮৮), মেহেরপুর (১৯৯২)।
লোকসংস্কৃতি বাউল গান, দেহতত্ত্ব গান, শাস্ত্র গান, মারফতি গান, পালা গান, কবি গান, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র
আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
মেহেরপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭
মেহেরপুর জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭
মেহেরেপুরের ইতিহাস - সৈয়দ আমিনুল ইসলাম
মেহেরপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য - তোজাম্মেল আজম
মেহেরপিডিয়া- জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান খান, প্রাক্তন জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর।
- আবুজার গাফফার
৪র্থ ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ



Comments
Post a Comment