Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

আসলেই কি নভেল করোনাভাইরাস মানবসৃষ্ট?




করোনা সমাচার  
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ট্রেন্ডিং যে শব্দযুগল তা হল করোনাভাইরাস। কিন্তু "ট্রেন্ডিং" শব্দটার বর্তমান ব্যবহারিক রুপের অনেক আগে অর্থাৎ ১৯৩০- এর দশকে করোনাভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয়। করোনাভাইরাস বলতে আসলে অনেকগুলো একই কাঠামোর ভাইরাসদের বোঝায় যারা নির্দিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। করোনাভাইরাস এর নামকরণ কিন্তু যুক্তিযুক্ত। লাতিন শব্দ "করোনা" এর অর্থ "মুকুট " আর ভাইরাসগুলোর যে স্পাইক বা অবয়বগত কাঠামো তা দেখতে মুকুটের মত,তাই এ নামকরণ।
বর্তমানে যে করোনাভাইরাস তান্ডব চালাচ্ছে তা সাধারণত নভেল করোনাভাইরাস নামে পরিচিত। অনেকে পশ ভাষায় অফিসিয়াল নাম SARS-CoV-2 ব্যবহার করেন। আর এ ভাইরাস সৃষ্ট রোগের নাম COVID-19 বা Corona Virus Disease.

দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে যে ধারনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং যা এখনও বিদ্যমান তা হল:
" নভেল করোনা ভাইরাস মানবসৃষ্ট"।

কিন্তু কোন ভাইরাস কি আগে কখনো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে? 
উত্তর : "হ্যা"।
যেমন- small pox,cholera ইত্যাদি . নিরীহ কিন্তু মারাত্মক কার্যকরি বায়োলজিক্যাল অস্ত্র নিয়ে গবেষণা প্রায় ১৫ টিরও বেশি দেশ করছে,যদিও আন্তর্জাতিক আইনে এ নিয়ে বিধি নিষেধ রয়েছে।
যাহোক, নভেল করোনা যে ভাইরাস মানবসৃষ্ট - এর বহুমুখী তত্ত্ব আছে যা মূলত বিভিন্ন দেশনির্ভর। যেমন-

আমেরিকান তত্ত্ব : 
আমেরিকান অনেক কর্তাব্যক্তি মনে করেন, চীনের উহানে অবস্থিত সামরিক বায়োলজিক্যাল ল্যাব থেকে নিরাপত্তা ত্রুটির কারনে এ ভাইরাসের সংক্রমণ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, এটা "চাইনিজ ভাইরাস " এবং এজন্য চীনকে দায়ী করে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ট্রাম্প বাবাজি খোলাখুলি হুমকিও দিয়েছেন, তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। ইতোমধ্যে চায়নার বিরুদ্ধে Lawyer Larry klayman 20 trillion dollars এর lawsuit আমেরিকার আদালতে দাখিল করেছেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা ড্যানি শোহাম আর রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ জোয়ান রাইট - এই তত্ত্ব ছড়িয়ে দিতে ভুমিকা রাখেন।এই তত্ত্বের বিশ্বাসী লোকদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধে আমেরিকাকে ঘায়েল করে চিনকে বিশ্বের এক নাম্বার পরাক্রমশালী দেশ হিসেবে জাহির করতেই চিনের এমন গভীর ষড়যন্ত্র।

কিন্তু তাই বলে চীন এর জনগনকেই বলি দিয়ে?
চীনে মত কম্মুনিস্ট দেশ যে "নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ" করতে পারে -এমন বিশ্বাস অনেক আমেরিকানের কাছে হয়ত অস্বাভাবিক নয়।

চীন/ ইরানীয়ান তত্ত্ব
চীন আর ইরানের সাথে মার্কিনীদের দা কুমড়া সম্পর্ক তা আর নতুন কি!
চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হরদমসে লিখছে এবং শেয়ার করছে যে চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও ঝাও লিজিয়িান টুইটারে দাবিই করেছেন,প্রথম করোনা রোগী নাকি মার্কিনমুলুকে পাওয়া গেছে।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি এবং জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করেন, এটা ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার "জীবাণু-অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা"

রাশিয়ান তত্ত্ব : 
সবাই যখন মাঠে, রাশিয়া আর বসে থাকবে কেন!
আমেরিকার পাশাপাশি, রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বিলাত সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের মতে,ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
তবে বরাবরের মত রুশ সরকার দাবি করছে, আমরা ভাই এসব প্রচারের আগেপাছে নাই, আমরা নিরীহ।
এখানে লক্ষণীয় উপরোক্ত সকল তত্ত্বের প্রবক্তা হল ক্ষমতাধর দেশের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ এবং এদের মুরিদ হল বরাবরের মত আলাভোলা কান পাতলা আম জনতা।এই সকল তত্ত্ব (পড়ুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব) proved বা disproved কোনটিই আপাতভাবে না বলে, তত্ত্ব ও এর প্রবক্তাদের ওপর দুর্বল ঈমানের কারনে এসবকে "Not proved" ক্যাটাগরিতেও ফেলা যায়।




এখন প্রশ্ন - বিজ্ঞানিরা কি বলেন?



আপাতভাবে নভেল করোনাভাইরাস এর RNA পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মানবসৃষ্ট ভাইরাসগুলোর বৈশিষ্ট্যের সাথে তা মিলে না।
অতীতে প্রাপ্ত বহুল আলোচিত দুটো করোনাভাইরাস:

১. SARS-CoV: এটা বাদুড় থেকে জন্ম নিয়ে সিভেট বিড়ালে মিউটেশন ঘটিয়ে মানুষের দেহে আসে।
২. MERS-CoV: এই করোনাভাইরাস উট থেকে মানুষে আসে।

নভেল করোনাভাইরাস বা SARS-CoV-2 ভাইরাসের সাথে উপরোক্ত ভাইরাসগুলোর মিল রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাইরাসও প্রাণির দেহ থেকেই এসেছে। এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে,নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বাদুড় আর বনরুই এর দেহে প্রাপ্ত করোনাভাইরাস এর সাথে যথাক্রমে ৯৬% এবং ৮৮.৫%-৯২.০৪% ম্যাচ করে। অনেকেই তাই ধারণা করেন, বাদুড় থেকে বনরুই এর দেহ ভ্রমণ করে তা মানুষের দেহে বাসা বেধেছে। আবার অনেকের মতে, বাদুড় ও বন্য বনরুই এর পারস্পারিক সংস্পর্শে মিউটেশন ঘটিয়ে কোনভাবে মানুষের দেহে এসেছে। বহুল আলোচিত চিনের উহানের Wet market এজাতীয় বন্য প্রানি কেনাবেচা হত এবং প্রথম আক্রান্ত ৯৯ রোগির মধ্যে ৪৯ জনের ঐ market এ আসা-যাওয়া ছিল।
দুর্ভাগ্যক্রমে,এখনও নভেল করোনাভাইরাসের হোস্ট প্রানি এবং প্রথম সংক্রমণ প্রক্রিয়া বৈজ্ঞানিকভাবে সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হয় নি। তাই, তথাকথিত তত্ত্বগুলোও বাতাসে ভাসমান।
পরিশেষে, বিখ্যাত জার্নাল "ল্যানসেট" এ বিজ্ঞানীদের বিবৃতি যেখানে তারা বলেছেন -
"জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়,গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে।"

তথ্যসূত্র: 
বিবিসি, বিবিসি বাংলা,Wired,Wikipedia,nti এবং অন্যান্য।

লেখক - 
আবদুল্লাহ - আল - মারুফ 
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন 

Comments