Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

মহাদেশ পরিচিতি পর্ব ৪ - অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ






নাম - অস্ট্রেলিয়া (মহাদেশ)
আয়তন - ৮৬,০০,০০০বর্গ কিমি(৭ম)
জনসংখ্যা -  ৩৮,০০০,০০০ (২০১৯-এ অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, পাপুয়া ও পশ্চিম পাপুয়ার আনুমানিক জনসংখ্যা, ৬ষ্ঠ)
জনঘনত্ব – ৪.২ /বর্গ কিমি(১১ /বর্গমাইল)
অধিবাসীদের নাম – অস্ট্রেলীয়
দেশসমূহ –৩ (অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও ইন্দোনেশিয়ার অংশবিশেষ)
ভাষাসমূহ – ইংরেজি, ইন্দোনেশীয়, টোক পিসিন, হিরি মোটু, ২৬৯টি আদিবাসী পাপুয়ান ও অস্ট্রোনেশীয় ভাষা এবং প্রায় ৭০টি আদিবাসী অস্ট্রেলীয় ভাষা
সময় অঞ্চলসমূহ – জিএমটি+১০, জিএমটি+৯.৩০, জিএমটি
বৃহত্তম শহরসমূহ – সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, অ্যাডেলেইড, গোল্ড কোস্ট-টুইড, নিউকাসল-মেইটল্যান্ড, ক্যানবেরা-কুয়ানবিয়ান, সানশাইন কোস্ট, ওলোনগং, হোবার্ট, ডারউইন, পোর্ট মোরসবাই, জয়পুরা, মানোকওয়ারি

এই মহাদেশটি একটি মহাদেশীয় সোপান নিয়ে গঠিত। এই সোপানটি একাধিক অগভীর সমুদ্র দ্বারা নিমজ্জিত। এই সমুদ্রগুলি সোপানটিকে একাধিক ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, আরাফুরা সাগর ও টরেস প্রণালী কর্তৃক নিউ গিনি এবং বাস প্রণালী কর্তৃক তাসমানিয়া অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ১৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ প্লেইস্টোসিন হিমযুগে (শেষ হিমবাহ ম্যাক্সিমাম সহ) যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কম ছিল, তখন এই অঞ্চলগুলি শুষ্ক ভূখণ্ড দ্বারা সংযুক্ত ছিল। বিগত ১০,০০০ বছরের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিম্নভূমিগুলি প্লাবিত হয় এবং কম উচ্চতায় অবস্থিত শুষ্ক থেকে প্রায়-শুষ্ক মূল ভূখণ্ড এবং নিউ গিনি ও তাসমানিয়ার দু’টি প্রকাণ্ড দ্বীপের সৃষ্টি হয়।

ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের (অধিকতর নির্দিষ্টভাবে বললে অস্ট্রেলীয় পাতের) অংশ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি হল পৃথিবীর নিম্নতম, মসৃণতম ও প্রাচীনতম ভূখণ্ড। এই ভূখণ্ডের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসও তুলনামূলকভাবে সুস্থিত। নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অংশ নয়। এটি জিল্যান্ডিয়া নামে একটি পৃথক নিমজ্জিত মহাদেশের অংশ।তবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া উভয়েই অস্ট্রালেশিয়া নামে পরিচিত ওশেনিয়ান উপ-অঞ্চলের অংশ। অন্যদিকে নিউ গিনি মেলানেশিয়ার অংশ।

গোড়ায় ওশেনিয়া শব্দটি বিশ্বের একটি "বৃহৎ বিভাগ" হিসাবে প্রযোজ্য হত। ১৯৫০-এর দশকে এটির পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়ার ধারণাটি গৃহীত হয়।বর্তমানে ওশেনিয়া শব্দটি প্রায়শই অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ, জিল্যান্ডিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ও সপ্ত-মহাদেশ মডেলের অন্তর্গত নয় এমন দ্বীপগুলি নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চলকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

এই মহাদেশের অন্তর্গত অন্যতম দেশ পাপুয়া নিউ গিনি সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে সারা বিশ্বে সর্বাধিক বৈচিত্র্যসম্পন্ন দেশগুলির অন্যতম।এই দেশের জনসংখ্যার মাত্র ১৮ শতাংশ শহরাঞ্চলের অধিবাসী।ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশে আনুমানিক ৪৪টি বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। এই মহাদেশের বৃহত্তম ভূখণ্ড অস্ট্রেলিয়া উচ্চ হারে নগরায়িত দেশ। এই দেশটি বিশ্বের ১৪শ বৃহত্তম অর্থনীতি। মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী এই দেশটির স্থান বিশ্বে ২য়।এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী জনসংখ্যা বিশ্বের মধ্যে ৯ম স্থান অধিকার করে।৫০,০০০ থেকে ৩০,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি এবং তার পূর্বদিকের বড়ো দ্বীপগুলিতে প্রথম মানুষের জনবসতি স্থাপিত হয়েছিল।

এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক পরিভাষা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের আগে একক প্লেইস্টোসিন যুগীয় ভূখণ্ডটি পরিচিত ছিল অস্ট্রালেশিয়া নামে। শব্দটির উৎপত্তি লাতিন অস্ট্রালিস (australis) শব্দটি থেকে, যার অর্থ "দক্ষিণ দিকের"। তবে এই শব্দটি অধিকাংশ স্থলেই এমন একটি বৃহত্তর অঞ্চলের নাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, একই মহাদেশীয় সোপানের উপর অবস্থিত না হয়েও নিউজিল্যান্ডের মতো ভূভাগ যে অঞ্চলের অন্তর্গত। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে প্লেইস্টোসিন যুগীয় মহাদেশটির ক্ষেত্রে বৃহত্তর অস্ট্রেলিয়া শব্দটি চালু হয়।ইতিপূর্বে সাহুল নামটি শুধুমাত্র সাহুল সোপানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হত। ১৯৭৫ সালের একটি সম্মেলনে এবং পরবর্তী প্রকাশনায় এই নামটির প্রয়োগের ব্যাপ্তি ঘটে এবং সমগ্র মহাদেশটিকে এই নামে অভিহিত করা হয়।

১৯৮৪ সালে ডব্লিউ. ফাইলউড প্লেইস্টোসিন মহাদেশ ও বর্তমান ভূখণ্ড উভয়ের ক্ষেত্রেই মেগানেশিয়া নামটি ব্যবহারের প্রস্তাব রাখেন। এই শব্দটির অর্থ মহাদ্বীপ অথবা মহাদ্বীপপুঞ্জ।নামটি জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে বহুলভাবে গৃহীত হয়।অন্যান্যেরা ম্যাগনেশিয়া শব্দটিকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেন। ভ্রমণ সাহিত্যিক পল থেরক্স তার সংজ্ঞায় নিউজিল্যান্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করেন।অন্যেরা এটিকে ব্যবহার করেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও হাওয়াই বোঝাতে।অপর জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডওকিনস ২০০৪ সালে অস্ট্রালিনিয়া শব্দটি প্রবর্তন করেন। এগুলি ছাড়া অস্ট্রেলিয়া-নিউ গিনি শব্দবন্ধটিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এই মহাদেশটি প্রাথমিকভাবে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান পাতের উপর অবস্থিত। ভূ-গাঠনিক পাতের কেন্দ্রস্থলে এই মহাদেশের অবস্থান। সেজন্য এখানে কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই। এটিই একমাত্র মহাদেশ যেখানে কোনো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই।৯ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে পাত সঞ্চরণ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডটি দক্ষিণাঞ্চলীয় মহা-মহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ হিসেবে আন্টার্কটিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারপর সুদীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়া-নিউ গিনি একক ভূখণ্ডের উপর অবস্থিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দে সমাপ্ত শেষ হিমবাহ পর্যায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাস প্রণালী সৃষ্টি হয়। সেই সময় তাসমানিয়া মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৮,০০০ থেকে ৬,৫০০ অব্দের মাঝে উত্তরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলি সমুদ্র কর্তৃক প্লাবিত হয়ে নিউ গিনি ও আরু দ্বীপপুঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

নিউ গিনি উচ্চভূমি, রাজা আমপাট দ্বীপপুঞ্জ ও হালমাহেরা নিয়ে গঠিত উত্তরের ধনুকাকার দ্বীপাঞ্চলটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর দিকে সঞ্চরণ ও প্রশান্তীয় পাতের উচ্চতা হ্রাসের জন্য উত্তরে সরে গিয়েছে। মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আউটার বান্ডা আর্ক (টিমোর, টানিমবার ও সারেম) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল।


অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির প্রায় ৭০ ভাগ সেবা খাত। তবে রপ্তানির সিংহভাগ খনন শিল্প ও কৃষিখাত থেকে আসে। অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রার নাম হল অস্ট্রেলীয় ডলার। চিহ্ন হল AU$, $AU, AUD, $A।অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও এই মদ্রা ব্যবহার হয় ক্রিস্টমাস আইল্যান্ড, কোকোস আইল্যান্ড, নোরফল্ক আইল্যান্ড। এছাড়াও স্বাধীন প্যাসিফিক আইল্যান্ড স্টেট কিরিবাটি, নাওরু এবং তুবালুর মুদ্রা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় অস্ট্রেলীয় ডলার। অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ হল অস্ট্রেলিয়ার সবথেকে বড় স্টক এক্সচেঞ্জ।


অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য -
  • অস্ট্রেলিয়া যদি একটি শহর হতো তবে তা ২৩. মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের সপ্তম জনবহুল শহর হতো। এই তালিকার ওপরে রয়েছে টোকিও, গুয়াংঝু, সাংহাই, জাকার্তা, সিউল এবং দিল্লি।
  • অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় জনসংখ্যা বাড়ছে। তাসমানিয়ায় প্রতি বছর ৫০০ জন মানুষ বাড়ে। এর চেয়ে বেশি সংখ্যক বাড়ছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়।
  • অস্ট্রেলিয়ায় ট্যাক্স রেট বাড়ছে, তবে মৃত্যুহার কমছে সবচেয়ে বেশি। সিডনিতে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম।
  • ১৯৪৬ সালের পর অস্ট্রেলিয়ায় জন্মহার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বর্তমানে বছরে ৩ লাখ ১০ হাজার শিশুর জন্ম হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
  • বিগত এক যুগ ধরে এখানকার দম্পতিরা নিজের পরিবার গঠন করছেন। তাদের ৩০ শতাংশের একই ধাঁচের পরিবার রয়েছে ।
  • প্রতি ১০ জন অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে একজন কর্মস্থলে যান পাবলিক বাসে চড়ে। এর চেয়ে বেশি মানুষ পায়ে হেঁটেই রওনা হন।
  • এখানকার ৫৪ শতাংশ পরিবারের অন্তত ২টি করে গাড়ি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রীর তুলনায় পাবলিক যানের সংখ্যা বেশি যা প্রায় ১৩.৩ মিলিয়ন।
  • অস্ট্রেলিয়ার ৭৪ শতাংশ মানুষ `নো ওরিস` কথাটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া ৭৩ শতাংশের মুখে `আভরো` এবং ৭১ শতাংশ ব্যবহার করেন `জি ডে` কথাটি।
  • প্রতি ১০০টি পরিবারে তিন বছরের কম বসয়ী ১০টি শিশু, ২৭টি বিড়াল এবং ৪৫টি কুকুর রয়েছে।
  • অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের সংখ্যা ১ লাখ বেশি। এর ৮টি রাজ্যের ৬টিতে পুরুষদের সংখ্যা ব্যাপকহারে কম।
  • অস্ট্রেলিয়ার ৪০ শতাংশ বেড়েছে প্রাকৃতিক কারণে এবং জনসংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়েছে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে। ওয়ার্ল্ড গ্রোথ রেট ১.১ শতাংশের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার রেট বেশি যা ১.৮ শতাংশ।

তথ্যসুত্র-
"Seven decades after Independence, many small languages in India face extinction threat"

লেখক - 
আরিফ জামান 
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ 



Comments