Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য


প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যঃ
পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য একটি জনপ্রিয় তালিকার নাম যাতে সমসাময়িক পৃথীবীর আশ্চর্যজনক মনুষ্য নির্মিত স্থাপনাসমূহের নাম স্থান পায়। এই স্থাপনাসমূহকে অবশ্যই হতে হয় ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্ব সম্পন্ন। প্রাচীনকালে হেলেনীয় সভ্যতার পর্যটকেরা প্রথম এ ধরনের তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই থেকে প্রতিটি যুগেই এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান, আর্টেমিসের মন্দির, অলিম্পিয়ার গ্রিক দেবতা জিউসের মূর্তি, আলেক্সান্দ্রিয়ার বাতিঘর, গ্রেট পিরামিড ঐতিহাসিক এই সপ্তাশ্চর্যগুলোর কথা কম বেশি আমরা সবাই জানি। কথিত আছে ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস এবং জ্ঞানী ক্যালিম্যাকোস আলেক্সান্দ্রিয়ার এই তালিকা তৈরি করে থাকেন। তবে তাদের এই তালিকার কোন দলিল পাওয়া যায় নি। সর্বশেষে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই তারিখে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়।

প্রাচীন যুগ:
১) ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান ,
২) আর্টেমিসের মন্দির ,
৩)অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি ,
৪)রোডস এর মূর্তি ,
৫)আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর ,
৬)হ্যালিকারণেসাসের সমাধি মন্দির
৭)গিজার মহা পিরামিড

মধ্য যুগ: 
১)আগ্রার তাজমহল
২)আলেকজান্দ্রিয়ার ভূগর্ভস্থ সমাধি
৩)চীনের প্রাচীর
৪)ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ
৫)রোমের বৃত্তাকার মঞ্চ
৬)নানকিনের চিনামাটির মিনার
৭)সেন্ট সোফিয়ার মসজিদ

নতুন সপ্তাশ্চর্য:
পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অসাধারণ স্থাপত্য ও নিপুণ শিল্পকর্ম। এর মধ্যে ২০০টি স্থাপনার তালিকা থেকে পৃথিবীর নতুন সাতটি আশ্চর্য বেছে নেয় সুইস সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন এবং এর বাইরে একটিকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এসব স্থাপনা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন জেনে নিই পৃথিবীর নতুন সাত আশ্চর্য হিসেবে বিখ্যাত এসব স্থাপনা নির্মাণের পেছনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

                 চিত্র - মাচু পিচু                      


১) মাচু পিচু  (Machu Picchu )
১৯১১ সালে ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচু পিচুর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ হিরাম বিংহ্যাম। তিনি এর নাম দেন ইনকাদের হারানো শহর। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র ও পেরুর সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এটাই। মাচু পিচুর আশপাশের ৩২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা ঘোষণা করা হয়। পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপর সুরক্ষিত পর্বতচূড়ায় এটি অবস্থিত।
১৪৫০ সালে ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগে মাচু পিচু নির্মিত হয়। ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এই স্থান ছিল ইনকা সম্রাট পাচাকুতিকের অবকাশযাপন কেন্দ্র। আবার অনেকের মতে এটি ছিলো মন্দির অথবা তাদের রাজার বাসস্থান তবে শহরের সব অধিবাসী গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়। আরেক ধারণা মতে স্পেনের রাজা মাচুপিচু আক্রমণ করে এর সোনার লোভে, সেইসময় তাদের অধিবাসী রা তাদের সোনা নিয়ে ত্যাগ করে এই শহর। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ৭ হাজার ৮৭৫ ফুট। ধ্রুপদী বাস্তুকলার নিদর্শন ও ইনকা সভ্যতার অনন্য স্বাক্ষর মাচু পিচুর ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চালানো নিষিদ্ধ। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে সূর্যমন্দির, ইনকাদের মতে সূর্যদেবতা এখান থেকেই উদিত হয়। অনেক প্রত্নতত্ত্ব বিদের মতে ইনকাদের শেষ অবলম্বন সোনা গুলো হয়তো এর আশেপাশেই কোথাও লুকানো আছে। মাচু পিচুকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে।

চিত্র - চীনের মহা প্রাচীর

২) চীনের মহা প্রাচীর  (The Great Wall of China)
চীনের মহাপ্রাচীর গ্রেট ওয়াল অব চায়নায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটে। এর মোট দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার। চীনের উত্তর সীমান্তকে মঙ্গোলীয়দের হাত থেকে রক্ষার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ২২০-২০৬ সনে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। অনেকের ধারণা, ১০ লাখ শ্রমিক এতে কাজ করেছিল। তাদের মধ্যে ৩ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। মিং যুগেও এই প্রাচীরের অনেকাংশ নির্মাণ হয়।
বেইজিং শহরকে ঘিরে থাকা মহাপ্রাচীরের অংশ পর্যটকদের কাছে বেশি প্রিয়। বেইজিং অংশের দেয়ালটি ২৬ ফুট উঁচু ও ১৬ ফুট প্রশস্ত। প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক ‘গ্রেট ওয়াল অব চায়না’ ঘুরে দেখে। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এই স্থাপনাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে।

চিত্র - ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার

৩) ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার (Christ the Redeemer)
ব্রাজিলের রিও ডি জানেইরো শহরে রয়েছে ১৩০ ফুট উঁচু যীশুখ্রিস্টের বিখ্যাত মূর্তি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়েছে যীশু। তার এক হাত থেকে অন্য হাতের দূরত্ব ৯২ ফুট। এর মোট ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। কংক্রিট ও শ্বেতপাথর দিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন অংশ তৈরি করে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে জোড়া দেওয়ার পর দাঁড়িয়েছে বিশালাকার এই মূর্তি। এর ভাস্কর ফ্রান্সের পল ল্যান্ডোস্কি। মূর্তিটির ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। এজন্য খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। ৯ বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে ১৯৩১ সালের ১১ অক্টোবর এর উদ্বোধন হয়।
রিও ডি জানেইরো তিজুকা ন্যাশনাল পার্কে করকোভাদো পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই মূর্তি। ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার ব্রাজিলের ঐতিহাসিক জাতীয় ঐতিহ্য। পর্যটকরা চাইলে পাহাড়ে যুক্ত করা ২২০ তলা পর্যন্ত লিফটে চড়ে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারকে ওপর থেকে দেখতে পারে। যীশুখ্রিস্টের এই মূর্তি দেখতে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ পর্যটক ব্রাজিলে যায়।

চিত্র - চিচেন ইৎজা 

৪) চিচেন ইৎজা  (Chichen Itza)
মেক্সিকোতে পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় দর্শনীয় স্থানের তালিকায় চিচেন ইৎজার নাম থাকে সবার ওপরে। এটি হলো মায়া সভ্যতার বিস্ময়নগরী। এই স্থাপত্য দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো। এর চারদিকে আছে চমৎকার সিঁড়ি। শিখরে দেখা যায় চৌকো ঘর। বর্তমানে এটি মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশটির ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব ইনস্টিটিউট এর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। মেক্সিকোর ইউকাতান রাজ্যের তিনুম মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্ভুক্ত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি ছিল মায়া সভ্যতার একটি বড় শহর।
চিচেন ইৎজার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘ইৎজার কুয়োর মুখে’। সুপেয় জলের কূপগুলোর জন্যই প্রাচীন মেক্সিকানরা এখানে বসতি স্থাপন করে। চিচেন ইৎজা দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক যায়। ১৯৮৮ সালে চিচেন ইৎজাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

চিত্র - কলোসিয়াম 

৫) কলোসিয়াম (Colosseum)
ইতালির রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত নির্দশন হলো কলোসিয়াম। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এতে রয়েছে রোমান প্রকৌশলের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য। নিষ্ঠুর সম্রাট টাইটাসের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইমারতটি মঞ্চনাটক, গ্লাডিয়েটরদের লড়াই, জীবজন্তুর লড়াই ও বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ব্যবহার করা হতো।
ইতিহাসবিদরা জানান, উদ্বোধনী দিনে হাতি, গণ্ডার, সিংহ, ভাল্লুক, বুনো মহিষসহ ৯ হাজার প্রাণীকে হত্যা করা হয় কলোসিয়ামে। পরে পশুর স্থলে শুরু হয় যুদ্ধবন্দিদের একে অপরের সঙ্গে মরণপণ লড়াই। রোমের শাসক জুলিয়াস সিজার ৩০০ গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই উপভোগ করেছিলেন। রক্তপিপাসু রোম সম্রাটদের আনন্দের খোরাক জোগাতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কলোসিয়ামের মাটিতে। লড়াইকারীদের বলা হতো ‘গ্ল্যাডিয়েট’। হলিউডে রাসেল ক্রো অভিনীত ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ ছবিটি তৈরি হয়েছে এই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে।
২১৭ খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির ক্ষতি হয়। এরপর ৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ও ১৩৪৯ খ্রিষ্টাব্দে দু’বার ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হতে বসে এই স্থাপনা। ষষ্ঠ শতকে এটি রূপান্তরিত হয় সমাধিক্ষেত্রে। দ্বাদশ শতকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক আবাসন হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয় ভবনটি। ত্রয়োদশ শতকে এটি হয়ে ওঠে দুর্গ। চারতলা বিশিষ্ট বৃত্তাকার ছাদবিহীন কলোসিয়ামের নির্মাণশৈলী বিস্মিত করে সবাইকে। এটি ১৮৯ মিটার দীর্ঘ ও ১৫৬ মিটার চওড়া। এর মূল এলাকা ছয় একর। বছরে প্রায় ৪০ লাখ ভ্রমণপিপাসু কলোসিয়াম দেখতে রোমে যায়।

চিত্র - পেত্রা 

৬) পেত্রা (Petra)
জর্ডানের ‘রোজ সিটি’ হিসেবে পরিচিত পেত্রা। চারপাশের গোলাপি মাটির খাড়া বাঁধের জন্যই এই ডাকনাম। জর্ডানে বেড়াতে গেলে পর্যটকরা পেত্রাকে প্রাধান্য দেয়। এটাকে বলা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রত্নতত্ত্বের অপূর্ব সম্মিলন। উট, ঘোড়া, গাধার পিঠে চড়ার সুযোগ আছে সেখানে। এছাড়া চা বিক্রেতাদের কেউ কেউ গুহায় চা বিক্রির পাশাপাশি ইংরেজিতে পেত্রার ধ্বংসাবশেষের গল্প শোনায়। জাদুময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে এই শহরের জুড়ি নেই। পেত্রাকে বলা হয় বিলুপ্ত নগরী। ১৮১২ সালে আরবের প্রাচীন এই শহর আবিষ্কার করেন সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ। জর্ডানের দক্ষিণ পশ্চিমে ওয়াদি মুসার পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সনে নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠে পেত্রা। গুহার মধ্যে তৈরি হওয়া এই নগরী ছিল সুরক্ষিত দুর্গ। পেত্রার চারধারে উঁচু পাহাড় আর ঝরনাধারা বিমোহিত করতো সবাইকে। রোমান শাসনের সময় সামুদ্রিক বাণিজ্য শুরু হলে এটি দ্রুত ধ্বংস হতে থাকে। মনে করা হয় আরবদের গুপ্তধন গুলো এর আশেপাশের পাহাড় অথবা গুহাতেয় হয়ত লুকানো রয়েছে। ৩৬৩ সালে ভূমিকম্পে এর দালানগুলো ধ্বংস হয়। মধ্যযুগে পেত্রার ধ্বংসাবশেষ ব্যাপক আলোচিত হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে পেত্রাকে। এর চার বছর পর ১৯৮৯ সালে পেত্রা ন্যাশনাল ট্রাস্ট গঠন করা হয়।

চিত্র - তাজমহল

৭) তাজমহল (Taj Mahal)
শতাব্দী ধরে ভারতের আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে জাদু ছড়াচ্ছে তাজমহল। অনেকের মতে, বিশ্বের যেকোনও স্থাপত্যের চেয়ে এর সৌন্দর্য বেশি। পুরোপুরি সাদা মার্বেল দিয়ে বানানো তাজমহল পূর্ণিমার আলোয় মুক্তার মতো ঝলমল করে। মোগল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজের প্রতি ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে এটি নির্মাণ করেন। এজন্য তখনকার সময়ে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি। ২২ বছর ধরে এটি বানাতে কাজ করেছে ২০ হাজার শ্রমিক। ১৬৪৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তাজমহলকে মোগল স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। এর নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুর্কি, ভারতীয় ও ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন রয়েছে। তাজমহলের উচ্চতা ২১৩ ফুট। এর চারটি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ১৬২ দশমিক ৫ ফুট। এতে ব্যবহৃত মালামাল ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার হাতি দিয়ে আনা হয়। তাজমহল নির্মাণের জন্য নদীর পাড় থেকে ৩ একর জায়গা ১৬০ ফুট উঁচু করা হয়। তাজমহলের সামনের চত্বরে ৩ হাজার ২২৯ বর্গফুট জায়গায় ১৬টি ফুলের বাগান রয়েছে। বাগানের মাঝখানে একটি উঁচু মার্বেল পাথরের পানির চৌবাচ্চা আর উত্তর-দক্ষিণ দিকে একটি সরল রৈখিক চৌবাচ্চা আছে। এতে তাজমহলের প্রতিফলন দেখা যায়। বৃক্ষশোভিত পথ ও ঝরনা তো আছেই। তাজমহলের গম্বুজগুলো মনোমুগ্ধকর। মূল গম্বুজের দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট। সূর্যোদয়ের সময়ে গম্বুজের সাদা মার্বেল গোলাপি আভা ছড়ায়। তাজমহলেই শাহজাহান ও মুমতাজ শায়িত আছেন। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট এটাই। তাজমহল দেখতে বছরে ৩০ লাখ পর্যটক সমাগম হয়। বায়ুদূষণকারী যানবাহন চলাচল সেখানে নিষিদ্ধ। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত করে তাজমহলকে।

চিত্র - গিজার পিরামিড


গিজার পিরামিড (The Great Pyramid of Giza)

এটিই একমাত্র প্রাচীন আশ্চর্য যা অনারারি খেতাব পেয়েছে। মিশোরের সবচেয়ে বড়, পুরোনো এবং আকর্ষনীয় পিরামিড হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক।
এইসবের মধ্যে, আমার পছন্দের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে কলোসিয়াম এবং পেত্রা যদিও এইসব স্থাপনা একটি অপরটির চেয়ে অনন্য। আর উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ করে তাজমহল না দেখে নিশ্চয় আপনি মারা যেতে চাইবেন না!

সূত্রঃ

লেখক -
জিনহার শবনম
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ



Comments