এই রাত তোমার আমার;ঐ চাঁদ তোমার আমার;শুধু দুজনের
-গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা হেমন্ত মুখপ্যাধ্যায়ের কন্ঠে গাওয়া একটি বিখ্যাত গানের লাইন। কিন্তু আসলেই কি চাঁদ আমাদের কারো ব্যক্তিগত সম্পদ হতে পারে? চলুন জেনে আসি এই মজার প্রশ্নের কোনো উত্তর আছে কিনা।
চাঁদ কি কারো
ব্যক্তিগত সম্পদ?
পৃথিবীর প্রথম
মানুষ হিসাবে প্রায় ৫০ বছর আগে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা রাখেন। এরপর তার বিখ্যাত বক্তব্যটি
ছিল-
মানুষের এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপটি মানব সভ্যতাকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেল
স্নায়ু যুদ্ধের
সময় মহাকাশ অভিযান শুরুর পরপরই মহাকাশের নানা বস্তুর মালিকানার বিষয়টি একটি ইস্যু
হয়ে ওঠে। যখন নাসা তাদের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ
করে, তখন জাতিসংঘে "বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি" বা "The Outer Space Treaty" নামের একটি চুক্তিপত্র গ্রহণ করা হয়।
১৯৬৭ সালের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য।
সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে, সেখানে
কোন দেশ দখল বা অন্য কোনভাবে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না।
প্রাচীন কালের জমির মালিকানা দাবি নিয়ে ইন্টারেস্টিং কিছু নিয়ম ছিল। তখন এরকম সমতল ভূমি ছিল না, ছিল শুধু পাহাড় আর ঘন বন জংগল। তো নিয়মটা হচ্ছে যে যে ব্যাক্তি একটা জংগলের যতটুকু জায়গা পরিষ্কার করে চাষযোগ্য করে তুলতে পারবে, ততটুকু পরিমাণ জায়গার মালিকানা সে পাবে। কারণ তখন মানুষের তুলনায় ভূমির পরিমাণ অনেক বেশী ছিল।
একবার চিন্তা করে দেখ, যদি এই চুক্তি স্বাক্ষরিত না হতো তাহলে কি হতো? প্রাচীন কালের জমির মালিকানা দখলের মত
আমেরিকা কি চাঁদ কে নিজের সম্পদ বলে দাবি করতো? বলাই যায় না, বিশ্বের অন্যতম পরাক্রমশালী
এই দেশটির পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
মহাকাশ বিষয়ক
কোম্পানি অলডেন এডভাইজারর্সের পরিচালক জোয়ানা হোয়েলার বলছেন, '' ওই চুক্তিটি হচ্ছে মহাকাশের ম্যাগনা কার্টার মতো। এর ফলে আর্মস্টং এবং অন্যরা চাঁদে যে পতাকা পুতে রেখে এসেছিলেন, সেটি অর্থহীন হয়ে পড়ে, যেহেতু চাঁদে কোন ব্যক্তি, কোম্পানি বা দেশের মালিকানা নাকচ হয়ে গেছে।''
১৯৭৯ সালে চাঁদ
ও মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে
সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ, যেটি ' মুন এগ্রিমেন্ট' নামে বেশি পরিচিত। সেখানে মূল
বিষয়গুলো ছিল, এসব কর্মকাণ্ড হতে হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং কোন মহাকাশ স্টেশন
বানাতে হলে আগে জাতিসংঘকে অবশ্যই জানাতে হবে কেন এবং কোথায় তারা সেটি বানাতে চায়।
আপনি কি চাঁদে
জমি কিনতে পারবেন?
আসলে বর্তমান
প্রেক্ষাপটে চাঁদ হলো মহাসাগরের মত। সবাই একে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু কেউ এর মালিকানা
দাবি করতে পারবে না।
১৯৬৭ সালের
মহাকাশ চুক্তির পর থেকে কোনো রাষ্ট্র চাঁদ কে নিজেদের সম্পদ বলে দাবি করতে পারছে না।
আপনি চাঁদে যেতে পারবেন এমন কি সেখান থেকে মাটি ও আনতে পারবেন কিন্তু মালিকানা দাবি
করতে পারবেন না।
কিন্তু এই চুক্তিতে
একটা বড় ভুল ছিল। সেখানে লেখা ছিল যে, কোনো রাষ্ট্র চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে
না; কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে কোনো সাধারণ মানুষ মালিকানা দাবি করতে পারবে কি না!
ব্যস! কিছু ব্যক্তিবর্গ উঠে পড়ে লাগলেন চাঁদকে নিজের সম্পদ বানানোর জন্যে। The Space Settlement Institute তো এয়ারলাইনের আদলে “স্পেসলাইন” চালু করতে চাইলো। কিন্তু
সব কিছু ছাপিয়ে যে ব্যক্তির নামটি না বললেই নয় তিনি হচ্ছেন – ডেনিস হোপ।
ডেনিস হোপ
৮০র দশক। স্নায়ু
যুদ্ধে পুরো পৃথিবী যখন পারমানবিক বোমা থেকে বাঁচার উপায় খুজছিলো তখন ডেনিস হোপ নামের
এক ব্যক্তি চাঁদে বসতি গড়ে তোলার কথা ভাবলেন।
ডেনিস হোপ ছিলেন
একজন জুতা বিক্রেতা। ডিভর্সের পরে তার দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। এমতাবস্থায় তাকে নতুন
কিছু শুরু করার কথা ভাবতে হচ্ছিলো। তখন তিনি প্রোপার্টি বিক্রির কথা ভাবছিলেন। ভাবতে
ভাবতে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই তিনি চাত দেখতে পেলেন। তখন তার মাথায়া আসলো চাঁদের
চেয়ে বড় সম্পদ তো আর হয় না।
এরপর তিনি লোকাল
লাইব্রেরি ও বিভিন্ন জায়গা থেকে মহাকাশ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন শুরু করলেন এবং ১৯৬৭ সালের
মহাকাশ চুক্তির ভুলটি খুজে পেলেন।
আমেরিকান আইন
অনু্যায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মালিক বিহীন সম্পদের মালিকানা দাবি করে এবং অন্য কোনো ব্যক্তি
সেই সম্পদে দাবি না রাখে এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর করাতে পারে তাহলে সে
উক্ত সম্পদের মালিক হয়ে যাবে। হোপ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ডকুমেন্ট তৈরী করেন এবং লোকাল
মেয়রের অফিস থেকে তা স্বাক্ষর করিয়ে নেন। সেই সাইন করা কপির দুইটি কপি তিনি যথাক্রমে
রাশিয়া ও জাতিসংঘে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই চিঠি কেউ না পড়ার ফলে আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী
ডেনিস হোপ হয়ে যান চাঁদের মালিক। ড্যানিস হোপ মাত্র চাঁদের মালিক হয়েই থেমে থাকেনি।
তিনি পত্রিকায় চাঁদ কিংবা চাদের জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন ও দিয়েছেন। তিনি চাঁদে প্রতি
একর জমি ২০ ডলার হিসেবে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি
কার্টারও তার কাছ থেকে চাঁদে জমি কিনেছে বলে জানা যায়। তার ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন
পর্যন্ত তার কাছ থেকে সর্বোমোট ৬১১ মিলিয়ন একর জমি মানুষ কিনেছে। কিন্তু আসলেই কি
তাই? তাহলে তো ড্যানিস হোপ এর পৃথিবীর সব চেয়ে বড় ধনীদের তালিকায় থাকার কথা।
আসলে পুরোটাই
ড্যানিস হোপ এর সাজানো। সাংবাদিকরা তার কাছে চাঁদের দলিল দেখতে চাইলে তিনি নিজের বানানো
একটি দলিল দেখায় যেখানে অনেক বানান ও গ্রামারে ভুল রয়েছে। তার অঞ্চলের মেয়রের অফিসে
জানতে চাওয়া হলে তারা এ সম্পর্কে কিছু জানেনা বলে দাবি করেছে। আসল দলিল তিনি সুরক্ষিত
রেখেছেন বলে দাবি করেন। তবে হ্যাঁ তার কাছ থেকে অনেকেই মজা করে কিংবা গিফট হিসেবে চাঁদের
জমি ক্রয় করেছেন। যা থেকে তার বাৎসরিক ২৭ থেকে ৩০ হাজার ডলার আয় হচ্ছে। ড্যানিস হোপ
১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজের বানানো এই স্ক্যাম থেকে আয় করছেন।
আমেরিকার পতাকা
কি এখনো চাঁদে আছে?
নাসার মহাকাশযান
থেকে তোলা কিছু ছবিতে দেখা যায়, এপোলো ১১ মিশনের সময় লাগানো পতাকাটি ছাড়া, চাঁদের মাটিতে আমেরিকার লাগানো সব গুলো পতাকা এখনো
দন্ডায়মান।
আপনি কি মুন
রক কিনতে পারবেন?
না। আপনি মুন
রক কিনতে পারবেন না। চাঁদ থেকে সংগৃহীত প্রতিটি বস্তুই সেই দেশের জাতীয় সম্পদ। তাই
কোনো দেশ ই এসব সম্পদ বিক্রি করে না।
মুন রক কোথায়
দেখতে পাওয়া যাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের
কিছু কিছু জায়গায় নাসা তাদের সংগ্রহে থাকা কিছু মুন রক দর্শনার্থীদের দেখার জন্য উন্মুক্ত
করে দিয়েছে। এই লিংকে গেলেই আপনারা এর অবস্থান দেখতে পারবেন - https://www.nasa.gov/specials/apollo50th/rocks.html
জাতিসংঘের গৃহীত
চুক্তিটির গ্রহণযোগ্যতা
বর্তমান সময়ে
বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চাঁদের মাটিতে খনন কাজ চালাতে ইচ্ছুক। তাদের ধারণা
সেখানে মূল্যবান ধাতুর মজুদ থাকতে পারে। তবে জাতিসংঘের গৃহীত চুক্তিতে বলা হয়েছিল,
চাঁদ এবং এর সকল প্রাকৃতিক সম্পত্তি মানব সভ্যতার সকলের সমান অধিকার থাকবে। যখন সেখান
থেকে খনি আহরণ সম্ভব হবে, তখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যারা সেই
আহরণের বিষয়গুলো দেখভাল করবে।
তবে ওই চুক্তিটির
সমস্যা হলো, মাত্র ১১টি দেশ সেটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স ও ভারত।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়ার মতো মহাকাশ গবেষণার প্রধান দেশগুলো
চুক্তিটি সমর্থন করেনি।
কোন চুক্তিতে
উল্লেখ করা আইনগুলোর প্রয়োগ করা ততটা সহজ নয়। কারণ এসব চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে
সেটিকে তাদের আইনে পরিণত করতে হবে এবং কোম্পানি বা ব্যক্তিদের সেটা মেনে চলতে বাধ্য
করতে হবে।
জার্নাল অফ
স্পেস ল' এর সাবেক প্রধান সম্পাদক জোয়ান্নে ইরিনে গ্রাব্রিনোভিচ বলছেন, আসলে আন্তর্জাতিক
সমঝোতা বাস্তবে কোন নিশ্চয়তা দেয় না। কারণ সেটি বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতি,
অর্থনীতি এবং গণ মতামতের ওপর নির্ভর করে।
আর মহাশূন্যের
গ্রহ-উপগ্রহের ওপর মালিকানা না থাকার বর্তমান চুক্তিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেশি
চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি
কিছু মজাদার
তথ্য –
· পৃথিবী থেকে আমরা সব সময়ই চাঁদের একই চেহারা (Face) দেখে থাকি। যদিও পৃথিবী ও চাঁদ উভয়ই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে, তবুও চাঁদ (যতটুকুই দেখা যায়) সর্বদা একই রকম, কেননা অনেক আগেই পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব চাঁদের নিজস্ব কক্ষপথের ঘূর্ণনকে ধীরগতির করে দিয়েছে। তাই এর অরবিটাল পিরিয়ড ও রোটেশন পৃথিবীর সাথে মোটামুটি মিলে যাওয়ায় চাঁদের ‘ছবি’ (অমাবস্যা/পূর্ণিমার ব্যাপার ভিন্ন) আর পরিবর্তিত হয়না।
· পৃথিবীর বুকে থাকা ৪০০’র বেশি গাছ এসেছে চাঁদের মাটি থেকে (!?!) আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে, ১৯৭১ সালে অ্যাপোলো ১৪ মিশনে নভোচারী স্টুয়ার্ট রোসা প্রায় ৫০০’র মত উদ্ভিদ-বীজ সাথে করে চাঁদে নিয়ে যান এবং লুনার সার্ফেসে রোপণ করেন। পরে সেগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে অঙ্কুরিত করা হয়। গাছগুলো এখনও বেঁচে আছে। এগুলো ‘মুন ট্রি’ নামে পরিচিত।
· আমরা অনেকেই হয়ত ভেবে থাকি যে, চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ (ন্যাচারাল স্যাটেলাইট); কিন্তু ১৯৯৯ সালে বিজ্ঞানীরা একটি ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণু আবিষ্কার করেন যেটি পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণে ধৃত হয়ে আরেকটি ‘চাঁদে’ রূপ নিতে পারে।
· অবাক হচ্ছেন? চাঁদকে আমরা গোল থালার মত দেখলেও এটি কিন্তু গোল কিন্তু বর্তুলাকার নয়। বরং, চাঁদের গঠন হচ্ছে ডিম্বাকার। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, চাঁদের ভরকেন্দ্র গ্রহটির জ্যামিতিক কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। এর অবস্থান চাঁদের কেন্দ্র থেকে ২ কিলোমিটার বাহিরে।
· চাঁদকে আমরা অনেকে স্বপ্নের জগত হিসেবে জেনে থাকলেও এখানেও প্রাকৃতিক বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। চাঁদে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হয়। এগুলো ‘মুনকোয়াক’ নামে পরিচিত।
· ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাতের পর ১৮৮৩ সালে 'ব্লু মুন' পরিভাষার জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সেসময় অগ্নুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে এতো বেশি ধুলো ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছিল যে মানুষ যখন পৃথিবী থেকে চাঁদের থেকে তাকিয়েছিল তখন তাকে দেখতে নীল মনে হয়েছিল। আর এ থেকেই তৈরি হয়েছে 'ওয়ান্স ইন এ ব্লু মুন' কথাটি। বিরল কোন ঘটনা বলতে এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়।
· যুক্তরাষ্ট্র একবার সত্যিই সত্যিই চাঁদের উপর পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণের কথা চিন্তা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা। বিশেষ করে রাশিয়াকে ভয় দেখানো। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অত্যন্ত গোপনীয় এই পরিকল্পনার নাম ছিল 'এ স্টাডি অফ লুনার রিসার্চ ফ্লাইটস' অথবা 'প্রজেক্ট এ১১৯।'
· সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে চাঁদ এসে পড়লে অথবা সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে চাঁদ এসে দাঁড়ালে তখন সূর্য বা চাঁদের আলো সাময়িকভাবে ম্লান হয়ে যায়। একে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ কিম্বা সূর্যগ্রহণ। একটি প্রাচীন চীনা বিশ্বাস হচ্ছে- একটি ড্রাগন যখন সূর্যকে গিলে খেয়ে ফেলে তখন সূর্যগ্রহণ হয়। তখন চীনারা তাদের পক্ষে যতোটা সম্ভব আওয়াজ সৃষ্টি করতে থাকে যাতে ড্রাগনটি ভয় পেয়ে দূরে চলে যায়। চীনারা একসময় আরো বিশ্বাস করতো যে চাঁদের গর্তের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ব্যাঙ বসবাস করতো। চারশো কোটি বছর আগে মহাকাশ থেকে ছুটে যাওয়া একটি পাথর চাঁদকে আঘাত করলে ওই গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল।
· চাঁদকে আমরা যখন ক্রিসেন্টের আকারে বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো দেখি তখন আমরা চাঁদ থেকে ছিটকে আসা সূর্যের আলোকেই দেখতে পাই। চাঁদের বাকি অংশটা খুব অস্পষ্ট দেখা যায়। সেটাও নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে। শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চিই হলেন প্রথম কোন ব্যক্তি যিনি উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে চাঁদ আসলে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে না, বরং এর কিছু অংশ লুকানো থাকে।
· চাঁদের আরো অনেক কিছুই আছে যা এখনও আমাদের অজানা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় এনিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে জরিপে অংশ নেওয়া লোকজনের ১৩ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে চাঁদ চীজ বা পনির দিয়ে তৈরি।
· সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে পড়ে? যেখানে চাঁদের দিকে নেকড়ের ভীতিকর গর্জনে শেষ হয় হরর সিনেমা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পূর্ণ জোৎস্না হলেও নেকড়ের কিছু যায় আসে না। এমনকি তারা সেদিকে তাকিয়ে গর্জনও দেয় না। তবে, রাতে নেকডের গর্জনের কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটোর সংযোগ ঘটিয়েছেন হয়ত।
· এখন পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদে হেঁটেছেন। নানান পেশা থেকে আসলেও কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে তাঁদের। মিলগুলো হচ্ছে- তারা সবাই অ্যামেরিকান, সবাই সাদা এবং সবাই পুরুষ। অ্যামেরিকানের বাইরে কিংবা নারীদের চাঁদে যাওয়ার জন্য আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে বোধহয়।
· থ্রি ইডিয়টস মুভিতে প্রিন্সিপাল ভাইরাস প্রশ্ন করেছিলেন যে চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় ব্যক্তি কে? উত্তরটি হল – বাজ আল্ড্রিন।
· যুক্তরাষ্ট্র তো একবার চাঁদে আন্ডারগ্রাউন্ড মিলিটারি বেস ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করেছিল।
আপনি যতক্ষণে
এই পোস্টটি পড়লেন, ততক্ষণে আমাদের পৃথিবী থেকে চাঁদ খানিকটা দূরে সরে গেছে। হ্যাঁ,
প্রতিবছর পৃথিবী থেকে কিছুটা রোটেশনাল এনার্জি নিয়ে নেয় চাঁদ। ফলে নিজস্ব কক্ষপথে বছরে
৩.৮ সেন্টিমিটার উপরে চলে যাচ্ছে চাঁদ। গবেষকরা জানিয়েছেন, সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবী থেকে
২২,৫৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল চাঁদ। কিন্তু এটি এখন ৪৫০,০০০ কিলোমিটার দূরে
চলে গেছে।
তথ্যসূত্র
-
- https://www.bbc.com/bengali/news-46941791
- https://www.popsci.com/science/article/2011-07/can-i-buy-the-moon/
- https://natunkagoj.com/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF/
- https://www.nasa.gov/specials/apollo50th/rocks.html
- https://www.quora.com/Why-is-it-illegal-to-sell-moon-rocks
- https://banglatech24.com/024921/some-moon-facts/
রিদওয়ান অনিন্দ্য
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Comments
Post a Comment