Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে আমরা কতটা জানি?



দেশের নাম - উত্তর কোরিয়া (North Korea)
অফিশিয়াল নাম - গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (Democratic People's Republic of Korea)
রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর – পিয়ং ইয়ং (Pyongyang)
সরকারি ভাষা – কোরীয়ান
সরকার - জুসে স্তালিনিয় একনায়কতান্ত্রিক শাসন (Unitary one-party republic)
সুপ্রীম লিডার – কিম জং উন 
আয়তন - ১, ২০,৫৪০ বর্গকিলোমিটার (৯৮ তম)
জনসংখ্যা - ২৫,৫৪৯,৬০৪ প্রায় (৫২ তম)
মাথাপিছু আয় – ১৮০০ ইউ এস ডলার (১, ৫৩,২০০/- টাকা প্রায়)
মুদ্রা – ওন (Korean People's won)

রহস্যময় দেশ উত্তর কোরিয়া । বেয়াড়া এই রাষ্ট্রটি ক্রমাগত দখল করে নিচ্ছে আলোচনার টেবিল। দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিশ্ববাসী খুব কম জানলেও আন্তর্জাতিক অংগনে উত্তর কোরিয়ার পরিচয় নিখাদ এক পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে। ক্রমাগত মিসাইল ছোড়ার হুমকি ধামকি আর তাদের নেতা কিম জং উনের উদ্ভ্রান্ত আচরন উত্তর কোরিয়া কে সাধারন মানুষের আগ্রহের বিষয়বস্তু করে তুলেছে। তাই উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানাতেই আজকের এই ফিচার।

ইতিহাস
১৯১০ - ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে অবিভক্ত কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়| তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদর্শে সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যায়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদি আমেরিকার মতাদর্শে এর পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দান করে। তখন থেকে কোরিয়া ২টি ভিন্ন নাম যথা উত্তর ও দক্ষিণ তথা ২টি ভিন্ন অথনৈতিক ব্যবস্থাতে চলতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমেরিকার পুঁজিবাদ আর উত্তর কোরিয়াতে সোভিয়েত ইউনিউনের মত সমাজতন্ত্রবাদ চালু হয়। এটিই ১৯৪৮ সালে পথ দেখিয়েছে অবিভক্ত কোরিয়াকে বিভক্তিকরণ। উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।
বিভক্ত কোরিয়াকে সংযুক্তিকরণের লক্ষে ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে। অবশেষে ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

সরকার
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রব্যবস্থা সাংবিধানিক ভাবে একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলেও দেশটি কার্যত একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থাতে পরিচালিত হয়। কিম জং ইলের নেতৃত্বে কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টিই হল দেশটির একমাত্র শাসক রাজনৈতিক দল। বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়াকে গত কয়েক দশক ধরেই শাসন করে আসছে কিম পরিবার। ২০১১ সালে বাবা কিম জন ইলের মৃত্যুর পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন কিম। দেশের সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। সংবিধানে গণতান্ত্রিক সরকারের কথা বলা হলেও কিম জং ইল ও মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা দেশটি পরিচালনা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে দেশটি একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হলেও মার্ক্সবাদ বা লেনিনবাদ নয়, বরং চুছে (Juche) তথা "স্বনির্ভরতা" হল দেশটির বর্তমান সরকারি রাজনৈতিক দর্শন।


কীভাবে পৃথিবীর বিচ্ছিন্নতম দেশ হলো উত্তর কোরিয়া?
স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, কেন উত্তর কোরিয়া এমন বিচ্ছিন্ন একটি দেশ। জেনে অবাক হবেন, এমন আত্ম-বিচ্ছিন্নতার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। যার সূত্রপাত বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কোরিয়ান পেনিনসুলা ভেঙে কোরিয়া দুভাগে বিভক্ত হওয়ারও অনেক আগে থেকে।
চতুর্দশ থেকে বিংশ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত অবিভক্ত কোরিয়াকে শাসন করত “চোসন রাজবংশ”, যারা দেশটিকে বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ ছিল।
প্রথমত, দেশটিকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
দ্বিতীয়ত, কনফুসিয়ান সংস্কৃতির সুবাদে নিজেদেরকে অন্যদের থেকে অনেক বড় মনে করা।
তবে একেবারেই কারো সাথে যোগাযোগ না রাখলে তো আর টিকে থাকা সম্ভব নয়, তাই চোসন শাসকরা সীমিত পরিসরে মৈত্রী বজায় রেখেছিলেন চীন ও জাপানের সাথে।
এবং মজার ব্যাপার হলো, একই সময়কালে জাপান ও চীনও কিন্তু আত্ম-বিচ্ছিন্নতার এই নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে কোরিয়ার বিশেষত্ব এই যে, অন্য দুই দেশের চেয়ে তাদের বিচ্ছিন্নতা অনেক বেশি দীর্ঘমেয়াদী ছিল।
উনবিংশ শতকে প্রথম পশ্চিমা শক্তিরা কোরিয়ার ডাকনাম দেয় হারমিট কিংডম (নির্জনবাসী সাম্রাজ্য)। কেননা তারা যখন বাণিজ্যের নাম করে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঢুকে পড়ছিল এবং একে একে সেসব অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করছিল, তখনো কোরিয়া নিজেদেরকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিল।
কিন্তু সবকিছুরই তো একটি সমাপ্তি রয়েছে। তেমনই কোরিয়ার আত্ম-বিচ্ছিন্নতার মেয়াদও একদিন ফুরিয়ে যায়। ১৯১০ সালে দেশটি চলে যায় জাপানের দখলে। তবে জাপানও খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন তাদের নির্মম পরাজয় হয়, তখন কোরিয়া চলে যায় যুদ্ধজয়ীদের নিয়ন্ত্রণে।
যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল তারা পুরো কোরিয়াই দখল করে নেবে। কিন্তু তা হতে দেয়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারাও দাবি করে বসে কোরিয়ার ভাগ। তখন দ্বিখণ্ডিত করা হয় কোরিয়াকে। ৩৮তম সমান্তরাল রেখার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় দুই কোরিয়ার সীমান্তরেখা। সীমান্তের উত্তরাংশের দখল পায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেটিকে নিজেদের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে দীক্ষিত করে তারা। আর দক্ষিণ অংশ নেয় পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী করা হয় পিয়ংইয়ংকে, আর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল।
তবে এটি হওয়ার কথা ছিল একটি সাময়িক ব্যবস্থা। পাঁচ বছরের মধ্যে পুনরায় কোরিয়াকে স্বাধীন করে দেবার শর্তে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মস্কো সম্মেলনে একটি ট্রাস্টিশিপও গঠন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ব্রিটেন।
বলাই বাহুল্য, যে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের, শেষ পর্যন্ত তাতে তারা পৌঁছায়নি। ফলে দুই কোরিয়ায় উদ্ভব ঘটে দুটি পৃথক সরকারের। জোসেফ স্তালিন উত্তর কোরিয়ার নেতা হিসেবে ক্ষমতায় বসান কিম ইল সাংকে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় শাসন করেন তিনি। এরপর তার জায়গায় দেশটির শাসন ক্ষমতায় বসেন কিম জং ইল। এবং বর্তমানে দেশটির সুপ্রিম লিডার হিসেবে রয়েছেন তার পুত্র কিম জং উন।

কিম জং উন

বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যখন চলছে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজতা ও দ্বন্দ্ব, তারই ভেতর ১৯৫০ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, যা ইতিহাসের পাতায় কোরীয় যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এ যুদ্ধে দুই কোরিয়া পাশে পায় তাদের নিজ নিজ মিত্রশক্তিকে।
কোরীয় যুদ্ধ ছিল এককথায় ভয়াবহ। আমেরিকানরা উত্তর কোরিয়ায় যে বোমা হামলা চালিয়েছিল, তারপর সেখানকার রাজধানীতে আর মাত্র একটি দালান বেঁচে ছিল। অবশেষে ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে কোরীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে বটে, কিন্তু দুই কোরিয়ার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের কোনো অবসান তাতে ঘটেনি, বরং সে দ্বন্দ্ব আজও অব্যহত রয়েছে।
১৯৫০-এর দশকে কোরীয় যুদ্ধের অবসানের পর থেকেই উত্তর কোরিয়া এক ভঙ্গুর মানসিকতার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। সব সময় তাদের মনে উৎকণ্ঠা, এই বুঝি আবার শত্রুপক্ষ তাদের দখল নিয়ে নিল। আর ঠিক এই কারণেই কিম ইল সাং একটি আত্ম-বিচ্ছিন্নতা দর্শনের অনুসারী হন, যেটিকে কোরীয় ভাষায় বলা হয় "জুশে"। এমনকি আজও দেশটির আনুষ্ঠানিক দর্শন হিসেবে বিবেচিত হয় এই জুশে।
এই দর্শন অনুযায়ী কিম ইল সাং রাষ্ট্র পরিচালনার তিনটি মূলনীতি দাঁড় করান: রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা, এবং সামরিক স্বায়ত্তশাসন। এবং এই রাজনৈতিক অবস্থান উত্তর কোরিয়াকে পরিণত করেছে একটি সত্যিকারের হারমিট কিংডমে। কেননা তারা শুধু সম্ভাব্য শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সাথেই নিজেদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেনি, বরং প্রায় একই রকম দূরত্ব বজায় রেখেছে অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাথেও।
অবশ্য চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সীমিত যোগাযোগ ছিল বটে উত্তর কোরিয়ার। কিন্তু চীন যখন পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়, তখন আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তারা।
গত শতকের শেষ দশকের শেষ ভাগে এসে দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে উত্তর কোরিয়ারও সম্পর্কের উন্নতির একটি ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সে ইঙ্গিত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বেই ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে যায়, যখন ২০০২ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ দেশটিকে অন্তর্ভুক্ত করেন অ্যাক্সিস অভ ইভিল বা দুষ্টচক্রের।
ওই একই বছর পিয়ংইয়ং থেকে অপসারণ করা হয় আন্তর্জাতিক পরমাণু পরিদর্শকদের। পরের বছর উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়, এবং জানায় যে তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানার স্বীকারোক্তি ছিল উত্তর কোরিয়ার আত্ম-বিচ্ছিন্নতার কফিনে শেষ পেরেক। ২০০৯ সালে তারা পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালায়। এরপর থেকে তারা নিজেদেরকে আরো বেশি বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে থাকে বহির্বিশ্বের কাছ থেকে। বিশেষত কিম জং উনের শাসনামলে এই বিচ্ছিন্নতা আরো প্রকট রূপ ধারণ করেছে।
আত্ম-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার মানুষ যে খুব ভালো আছে তা-ও কিন্তু নয়। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সব ধরনের মানবাধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানে গণমাধ্যমের নেই কোনো স্বাধীনতা। নেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। সাধারণ মানুষেরা চরম অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপরাধে (যেমন কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ার ডিভিডি দেখে) মানুষকে জেলবন্দি করা হচ্ছে। নারীরা চরম শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। মানুষের উপর বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক শ্রমের নীতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বিদেশীরাও। পর্যটকরা দেশটিতে বেড়াতে গিয়ে নিয়মিতই অপদস্থ হচ্ছে, অনেককে আটক করেও ফেলা হচ্ছে।

সামরিক শক্তি
বিশ্বে বর্তমান সময়ে উত্তর কোরিয়া বৃহৎ সামরিক শক্তির দেশ।  উত্তর কোরিয়ার রয়েছে হাউড্রোজেন বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি। পরমাণু অস্ত্র ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার ১২ লাখ সেনা আছে। আর্মির সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার।
উত্তর কোরিয়া মিলিটারির অফিসিয়াল নাম কোরিয়ান পিপলস আর্মি। মোট পাঁচটি শাখার সমন্বয়ে গঠিত এই সামরিক সংস্থা। পাঁচটি শাখা হচ্ছে আর্মি গ্রাউন্ড ফোর্স, নেভি, এয়ারফোর্স, আর্টিলারি গাইডেন্স ব্যুরো ও স্পেশাল অপারেশন ফোর্স। বার্ষিক বাজেট প্রায় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আট শতাধিক ব্যালাস্টিক মিসাইল রয়েছে।  স্কাড মিসাইল অনায়াসে যে কোনো দিকে ছুটতে পারে। নুডং মিসাইল আঘাত হানতে পারে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে। নতুন মডেলের একটি মিসাইল দিয়ে ১৫ হাজার দূরত্বের আঘাত হানতে সক্ষম উত্তর কোরিয়া। দেশটির দুই থেকে ৯টি পারমাণবিক বোমার কাঁচামাল আছে।


উত্তর কোরিয়ার ডুবোজাহাজ- ৭০টি, ট্যাংক- ৪২০০টি, জঙ্গিজেট ৪৫৮টি, ফিক্সড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ৫৭২টি, সৈন্য সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন, নেভি শিপ ৭০৮টি, মার্চেন্ট মেরিন স্ট্রেন্থ ১৬৭টি, প্রধান বন্দর ১২টি, সাবমেরিন ৯৭টি, পেট্রল ও কোস্টাল ক্রাফট ৪৯২টি, মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট ২৩টি, উভচর ক্রাফট ১৪০টি, ল্যান্ড-বেইজড অস্ত্র ১৬ হাজার ৪০০টি, সাঁজোয়া যান- ২,৫০০টি, সেলফ-প্রোপেলড গান ৪ হাজার ৪০০টি, মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার সিস্টেম ২ হাজার ৫০০টি, মর্টার্স ৭ হাজার ৫০০টি, এন্টি-এয়ারক্রাফট অস্ত্র ১১ হাজার,  মোট এয়ারক্রাফট ১ হাজার ৭৭৮টি, হেলিকপ্টার ৬২১টি, এয়ারপোর্ট ৭৭টি।

পারমানবিক শক্তি
১৯৫০ সাল থেকেই উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আসলে তারা কিভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা পরীক্ষার করছে তা এক রহস্য। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও তারা ২০০৬, ২০০৯, ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৭ তে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। মূলত তারা বিশ্ব কে জানান দিতে চায় যে তাদের কে কেউ যেন হালকা ভাবে না নেয় । তারা জানাতে চায়, যে কোনো দেশ কে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার সক্ষমতা তাদের আছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যুক্ত্রাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট এ একটি খবর লিক হয় যে উত্তর কোরিয়ার কাছে নিউক্লিয়ার বোম্ব রয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে হাইড্রোজেন বোম্ব আছে কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।  
কিন্তু পিয়ং ইয়ং বলেছে যে ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে তারা প্রথম বারের মত হাইড্রোজেন বোম্ব এর পরীক্ষা চালিয়েছিল যা ৬.৩ মাত্রার ভূমি কম্প সৃষ্টি করেছিল। ধ্বংসের জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র পৃথিবীতে আর নেই। আনবিক বা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি শক্তিধর হতে পারে হাইড্রোজেন বোম্ব।
মানবজাতির জন্য ‘অভিশাপ এই হাইড্রোজেন বোমা তৈরি হয় কীভাবে? প্রক্রিয়াটি ভীষণ জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ। তারপরও উত্তর কোরিয়ার মতো গরিব ও অনগ্রসর দেশ কেমন করে এই বোমা তৈরি করছে, তা রীতিমতো বিস্ময়ের। বিস্ফোরণপরবর্তী ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের নাগাসাকি শহরে ফেলা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমাটি পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী। নাগাসাকিতে ফেলা ‘ফ্যাটম্যান’ নামের বোমার আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল পুরো শহর। এ থেকে উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

মিসাইল প্রদর্শনী

তারা আরো দাবি করছে, এই বোমা তাদের দূরপাল্লার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। খুবই উদ্বেগের বিষয়। সত্যি, তারা যদি কখনো এই বোমা দিয়ে কোথাও আঘাত হানে, তাহলে সে মুহূর্তে বলতে হবে, ‘গেম ইজ ওভার
আসলে নিশ্চিত ভাবে কোনো খবর প্রকাশ না হওয়ার কারণে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে রহস্য থেকেই যায়।  

ধর্ম চর্চা
ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ। কারো কাছে কোরআন বা বাইবেল পাওয়া গেলে নিশ্চিত জেল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, ধর্ম নিয়ে সেখানে লোকদেখানো কিছু কর্মকান্ড আছে। আসলে নাগরিকদের কিম পরিবারের বন্দনা করা ছাড়া ধর্মীয় কোনো স্বাধীনতা নেই।

মানবাধিকার চর্চা
উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার চর্চা খুবই সীমিত। যদিও তারা তাদের সংবিধানে মানবাধিকারের অনেক কথা বলেছে কিন্তু কিছু কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মতে, উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার চর্চা খুবই সীমিত এবং তাদের সংবিধানে যেসন মানবাধিকারের কথা উল্লেখ আছে তা লোক দেখানো মাত্র। Amnesty International ও  U.S. Committee for Human Rights in North Korea এর দাবি, উত্তর কোরিয়ার মানুষদের বাক স্বাধীনতা নেই এমন কি তাদের রেডিও, টেলিভিশন এবং বিনোদনের সকল মাধ্যম সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক নারী শুনিয়েছেন আতকে ওঠার মত সব খবর –
“ মা ও বাবা দুজনেরই খুব আদরের ছিলাম আমি। তারা একেবারে শিশুকাল থেকেই আমাকে নিজের সম্বন্ধে সচেতন হতে শিখিয়েছেন। বাবা মাঝে মাঝে আমাকে তার কোলে বসিয়ে শিশুদের বই পড়িয়ে শোনাতেন। তবে রূপকথার বই নয়। রূপকথার বই উত্তর কোরিয়ায় পাওয়া যায় না। এদেশে বই প্রকাশ করতে পারে কেবল সরকার এবং সেসব বই রাজনৈতিক বিষয় দিয়ে ঠাসা। রূপকথা নেই, রাজপুত্র ও রাজকন্যা নেই, রাক্ষসখোক্ষস নেই, কী আছে তবে সেসব বইতে? আছে দক্ষিণ কোরিয়া নামের এক ‘ভয়াল দেশের কথা। ওই দেশে শিশুদের থাকার জন্য বাড়ি নেই, তারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে। তাদের পায়ে এমনকি জুতোও নেই। “

আমাদের আরো পড়তে হতো আমাদের নেতাদের কথা যে, এই নেতারা আমাদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন, ত্যাগ স্বীকার করছেন। বইয়ে লেখা ছিল, আমাদের প্রিয় নেতা কিম জং ইল-এর আছে অলৌকিক ক্ষমতা। তিনি ইচ্ছাশক্তির জোরে আবহাওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিম ইল সুং ইউনিভার্সিটিতে তিন বছর পড়াশোনাকালে তিনি দেড় হাজার বই লিখেছিলেন ইত্যাদি। “

ইন্টারনেট
যেখানে বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা চলতেই পারিনা সেখানে উত্তর কোরিয়ার জনগনের জন্য ইন্টারনেট যেন সোনার হরিণ। এখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শুধুমাত্র সরকারী উচ্চ পদস্থ কিছু কর্মকর্তাগনেড় এবং কিছু শিক্ষা ও গবেষনা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট এক্সেস রয়েছে। তাছাড়া অন্যদের জন্য রয়েছে সে দেশের নিজস্ব একটি অন্তর্জাল ব্যবস্থা “ Kwangmyong “। এখানে শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কন্টেন্ট গুলোই পাওয়া যায়।

ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত

অজানা তথ্য –
  • -      উত্তর কোরিয়ার জনগণদের কোনো কর বা ট্যাক্স দিতে হয় না।
  • -      সামুদ্রিক মাছ রপ্তানীতে এ দেশ শীর্ষদের কাতারে।
  • -   উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের উত্তরে রয়েছ এক “প্রোপাগান্ডা শহর”। দক্ষিণ কোরিয়ান রা যেন তাদের গরীবি অবস্থা টের না পায় এজন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে তারা একটি মডেল টাউন তৈরী করে রেখেছে। সেখানে রয়েছে সু উচ্চ দালান, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সেনাদের টহল। কিন্তু তাদের এ মিথ্যা ঢাকা থাকেনি।
  • -      পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সামরিক সেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
  • -      অর্ধেকের বেশি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।
  • -      বেশীরভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানি এবং চিকিৎসা সেবার মত সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
  • -      তাদের মূল আয় আসে কৃষিকাজ থেকে। কিন্তু তাদের জমিগুলো এতই অনুর্বর যে সেগুলোকে চাষাবাদ যোগ্য করতে তারা তাদের নিজেদের মল ব্যবহার করে।
  •  -      আইফোন, জিন্স, কোকাকোলা নিষিদ্ধ।
  • -      ১৫ টি বাদে বাকি সব হেয়ার স্টাইল নিষিদ্ধ।

মিথ
  • -      কিম জং ইল নাকি বাথরুমে যেতেন না।
  • -      যখন কিম জং ইল জন্মগ্রহণ করেন তখন নাকি আকাশে নতুন একটি তারার সৃষ্টি হয়েছিল।
  • -      তিনি নাকি চিন্তা দিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন।
  • -      হাতে গোনা কয়েকটি ওয়েবসাইট ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট নিষিদ্ধ।


সোর্স -  

লেখক –
রিদওয়ান অনিন্দ্য
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



Comments