Skip to main content
শারদীয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন , করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন -------- STAY HOME STAY SAFE protect your family

সুপ্রীম লিডার কিম জং উন সম্পর্কে কতটা জানেন?


দুনিয়াবাসীর কাছে রহস্যে ঘেরা এক রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া। এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির খুব সামান্য পরিমাণ ই বিশ্ববাসীর জানতে পেরেছে। তাদের রাষ্ট্র নেতা কিম জং উন এর উদ্ভ্রান্ত আচরণ আর ক্রমাগত মিসাইল ছোড়ার হুমকি ধামকি তাকে সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয় বস্তু করে তুলেছে। দোর্দণ্ডপ্রতাপ উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনকে কতটা চিনি আমরা? আজ চোখ রাখা যাক, কিম জং উন সংক্রান্ত নানানতর অজানা তথ্যে।

জন্ম
কিম জং-উনের বাবা কিম জং-ইলের তিনজন স্ত্রী ছিল বলে জানা যায়। সেই তিন ঘরে তার মোট ছয় সন্তান জন্ম নিয়েছিলো। কিম জং-ইলের প্রথম স্ত্রী ১৯৭১ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে স্বামীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। নির্বাসনে থাকাবস্থায় মস্কোতে তার মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে কোনো পুত্রের জন্ম হয় নি, সেখানে জন্ম হয় দুই কন্যা সন্তানের। জং-ইলের তৃতীয় স্ত্রী কো ইয়ং-হোই ছিলেন জাপানী বংশোদ্ভূত এক গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী। এ ঘরে কিম জং-চল ও কিম জং-উন নামক দুই পুত্র এবং কিম ইয়ো-জং নামক এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

ছোটবেলায় কিম জং উন
উনের জন্মদিনটি কোরিয়ানদের কাছে আজও অজানা। দিনক্ষণ না জানা থাকলেও বছরটি ১৯৮৪ বলে একটা গুঞ্জন রয়েছে। তাঁকে নিয়ে এমন অজানা অনেক বিষয়ই রয়েছে দেশটির অধিবাসীদের কাছে।
আসলে নিজেকে বয়স্ক হিসেবেই দেখাতে পছন্দ করেন উত্তর কোরিয়ার শাসক। তাঁর জন্মের সাল এবং তারিখ নিয়ে নানান ধন্দ্ব এবং ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছেন কিম নিজেই। কোথাও বলা হয় কিমের জন্ম ১৯৮২ সালে। কোথাও আবার ১৯৮৩। এমনকী কোথাও কোথাও কিমের জন্মের সাল ১৯৮৪ ও করা হয়েছে। শুধু সাল নয়। জন্ম তারিখ নিয়েও বিস্তর ধন্দ্ব। যে সমস্ত জায়গায় এই সালগুলি লেখা হয় সেখানে কিমের জন্ম তারিখ হিসেবে হয় ৮ জানুয়ারি না হলে ৬ জুলাই লেখা হয়। তবে কিম কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজের জন্মের সাল লেখেন ১৯৮২। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার এক গোয়েন্দা সংস্থা বিগত কিছু বছর আগেই জানিয়েছিল কিমের জন্ম ১৯৮৪ সালে।

শৈশব ও শিক্ষা জীবন
কিম জং-উন ছোটবেলা থেকেই ছিলো বাবার নয়নের মণি। শৈশব থেকেই জং-উনের মাঝে এক ধরনের প্রাধান্য বিস্তারকারী মনোভাব ছিলো, ছিলো নেতৃত্ব দেয়ার গুণও।
যখন কোনো বাস্কেটবল খেলা শেষ হতো, তখন উনের ভাই জং-চল নীরবে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যেতেন। অন্যদিকে জং-উন থেকে যেতেন, সতীর্থদের সাথে সেদিনের খেলার ভুল-ত্রুটিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করতেন, যেন সামনের দিনগুলোতে সেই ভুলগুলো আর না হয়। জং-উন কখনো হারতে পছন্দ করেন না। এর ছাপ ফুটে উঠেছিলো তার শৈশবেই। যদি কোনো বোর্ড গেমে তিনি হেরে যেতে থাকতেন, তাহলেই রাগের চোটে সব গুটি ছুড়ে মারতেন জং-চলের দিকে!
অষ্টম জন্মদিনের সময় কিম জং-উনকে উপহার হিসেবে আর্মি জেনারেলদের একটি ইউনিফর্ম দেয়া হয়েছিলো। এরপর থেকেই দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা ছোট জং-উনের সামনে মাথা নত করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতো।

মায়ের সাথে উন
রহস্যময় শৈশবের অধিকারী উনের শৈশব নিয়ে খুব বেশী তথ্য জানে না খোদ তার দেশের সাধারন মানুষজন। অবশ্য কিম জং-উনের শৈশব নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় যত কাহিনী প্রচলিত আছে, তার কতগুলো যে সত্য সেই সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন অনেকেই। তাদের মতে এগুলো অতিরঞ্জিত করা। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়ার মতে, তাদের নেতা শৈশবে চমৎকার লক্ষ্যভেদ করতে পারতেন, তিনি ছিলেন ‘জিনিয়াসদের জিনিয়াস’! ষোল বছর বয়সে কোরিয়ান যুদ্ধে দাদা কিম ইল-সুংয়ের বীরত্বের উপর তিনি একটি গবেষণাপত্রও রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। নিজের ছোটবেলার ছবি দেখাতে এক্কেবারেই পছন্দ করেন না কিম। তবে ২০১৪ সালের সামরিক ছুটিতে উত্তর কোরিয়ায় বড় পর্দায় একটি ছবি দেখানো হয়েছিল। মনে করা হয়, এটিই কিমের শৈশবের ছবি।

ভিন্ন পরিচয়ে পড়াশোনা
ধারণা করা হয়, ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল অবধি তিনি সুইৎজারল্যান্ডের বিখ্যাত Liebefeld-Steinhölzli পাবলিক স্কুলে পড়াশোনো করেন। উত্তর কোরিয়ান দূতাবাসে তাঁর রেজিস্ট্রেশন অবশ্য হয়েছিল ভিন্ন নামে। অর্থাৎ কিম জং উন নিজের পরিচয় গোপন করে পড়াশোনা করেছেন। সবাই তাকে তখন চিনতো উত্তর কোরীয় এক কূটনীতিকের সন্তান হিসেবে। সহপাঠীদের কাছ থেকে তার সম্পর্কে পাওয়া যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জোয়াও মাইকেলো ও আরো কিছু সহপাঠীর মতে, জং-উন জেমস বন্ডের সিনেমা আর বাস্কেটবল খুব পছন্দ করতেন। দামি স্নিকার ও নানা ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার করতেন বলে অন্যদের থেকে তাকে খুব সহজেই আলাদা করে চোখে পড়তো। তার জন্য একজন করে বাবুর্চি, গাড়ির ড্রাইভার এবং প্রাইভেট টিউটরও নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো সে সময়। তাঁর ওই সময়ের সহপাঠীরা এখন হলফ করে বলেন যে তাদের বন্ধুই এখন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এক রাষ্ট্র নায়ক। পাশাপাশিই কিম জং উনের সহপাঠীরা এ-ও বলেন যে, ছাত্র হিসেবে মোটেই ভালো ছিলেন না উত্তর কোরিয়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক। যদিও পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রি রয়েছে কিম জং উনের।
কিম জং-উনের বেশ কয়েকজন সহপাঠী জানিয়েছেন, ছাত্রজীবনে তিনি বেশ রসিক ছিলেন। সবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো তার, এমনকি উত্তর কোরিয়ার ‘শত্রু’দেশগুলো থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সাথেও ছাত্রজীবনে সুসম্পর্ক ছিলো কিমের। তবে মাঝে মাঝে মেজাজ হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও আছে, যা কমবেশি সব মানুষের বেলাতেই ঘটে। ২০১০ সালে প্রকাশিত মার্কো ইমহফ নামে জং-উনের এক সহপাঠীর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, একবার ঠান্ডা স্প্যাগেটি দেয়ায় রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে আচ্ছামতো বকাঝকা করেছিলেন কিম, যা ঠিক তার সাথে যেত না।

সুইজারল্যান্ডে বন্ধুদের সাথে
ইউরোপে কৈশোর কাটিয়ে বাড়িতে ফেরার পর স্বদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যত এ সুপ্রিম লিডার, বিমোহিত ছিলেন বাইরের দেশগুলোর অত্যাধুনিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো নিয়ে। নিজের দেশের স্টোরগুলোর করুণ অবস্থা নির্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, “জাপান আমেরিকার কাছে পরাজিত হয়েছিলো, কিন্তু তারপরও তারা তাদের দেশকে পুনরায় গড়ে তুলেছে। তাদের স্টোরগুলো মালপত্রে বোঝাই ছিলো। তাহলে আমাদের দেশের এমন অবস্থা কেন?”
এই অংশ পর্যন্ত পড়ে আর আট-দশজন কিশোরের সাথে কিমের মিল খুঁজে পাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু ব্যতিক্রম ব্যাপারগুলো ঘটা শুরু করে তিনি দেশে ফিরে আসার পরই। ইউরোপে স্কুল-কলেজ জীবনের শিক্ষা লাভ করলেও কিম গ্র্যাজুয়েশন করেন নিজ দেশে এসেই। ২০০৬ সালে কিম ইল-সুং মিলিটারি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতি টানেন তিনি। এরপর সামরিক বাহিনীতে তার উত্থান হতে থাকে দ্রুতই। বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার পরপরই বিভিন্ন মিলিটারি ইউনিট পরিদর্শন করছেন তিনি।

যেভাবে সুপ্রিম লিডার হলেন
২০১১ সালের জানুয়ারীর শুরুতেই অনেক উত্তর কোরিয়াবাসী জানতে পারেন যে, সে বছরের ৮ ই জানুয়ারী এক বিশেষ দিনের মর্যাদা পেতে চলেছে। এক তরুণ নেতা কে চার তারকা জেনারেল এবং দেশটির শীর্ষ নির্বাহী কমিটির প্রধান হিসেবে বরন করে নিতে দেশটিতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান। সেই তরুন ই আজ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ একনায়ক। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম প্রথমবারের মতো সন্ধান পায় তাদের তৎকালীন নেতা কিম জং-ইলের সন্তান কিম জং-উনের। বাবার সাথে তার উপস্থিতির ধরন দেখেই দেশটির জনগণ বুঝতে পেরেছিলো তাদের ভবিষ্যত নেতা কে হতে যাচ্ছে। এক বছর পর যখন কিম জং-ইল মারা যান, তার অল্প কিছুদিন পরই দেশটির সুপ্রিম লিডার হিসেবে ঘোষণা করা হয় কিম জং-উনের নাম।

বাবার সাথে প্রথমবার জনসম্মুখে
বাবা কিম জং-ইলের মৃত্যুর পর কিম জং-উনের উত্থান যেন ছিলো অনেকটা গল্পের মতো। মাত্র বছর পাঁচেক আগেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলেন তিনি, আশেপাশে অভিজ্ঞ সামরিক নেতারও অভাব ছিলো না। তবু দেশটির নেতার আসনে গিয়ে বসলেন তিনিই। বসার পরে অনেকে ভেবেছিলো কিম শুধু নামেই সুপ্রিম লিডার থাকবেন, প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে তার আঙ্কেল ও রাজপ্রতিভূ জ্যাং সং-থায়েকের হাতে। কিম জং-উনের সবচেয়ে কাছের পরামর্শক ছিলেন জ্যাং সং-থায়েক এবং তার স্ত্রী কিম কিয়ং-হুই। কিম জং-ইল তাদের দুজনকেই বলে গিয়েছিলেন যেন তার মৃত্যুর পর তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর দেখাশোনা করেন এবং কিম জং-উনকে তার ক্ষমতা সুদৃঢ় করতে সাহায্য করেন। এ দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করছিলেন তারা। অন্যদিকে কিমের অবস্থান সুদৃঢ় করতে দেশটির অনেক ক্ষমতাধর জেনারেল ও আমলাকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ।

এক গাদা রাষ্ট্রীয় পদবী
‘ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অব কোরিয়া’র সর্বাধিনায়ক, পার্টি ও জনগনের নেতা’র আরো কিছু নাম আছে। যেমন – নতুন সূচনা, দ্য ব্রিলিয়ান্ট কমরেড, সবার চেয়ে তুখোড়, দ্য মার্শাল অব নর্থ কোরিয়া (২০১২ সাল থেকে)। এই ‘ভদ্রলোক’-এর ইউনিভার্সিটি অব কিম ইল-সাং থেকে পদার্শবিজ্ঞানের ডিগ্রী আছে। একই সাথে তিনি মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হেলপ (HELP) থেকে অর্থনীতিতেও পড়াশোনা করেছেন।

বাপ-দাদার অনুকরণ
উত্তর কোরীয় জনগণের কাছে কিম জং-উনের দাদা কিম ইল-সুংয়ের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। এমন কথাও শোনা যায় যে, বর্তমান কিম চলনে-বলনে, কথাবার্তার ধরনে, এমনকি সিগারেট ধরার স্টাইলেও তার দাদার মতো হতে চাইছেন। শুধুমাত্র এজন্যই নাকি তিনি দেহের ওজন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন! বায়েক ইয়ু-মিন নামে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তির মতে, “উত্তর কোরীয়রা যখন প্রথমবারের মতো তাকে দেখলো, তখন তারা ভেবেছিলো স্বয়ং কিম ইল-সুংয়েরই বোধহয় পুনর্জন্ম হয়েছে!”


বিভিন্ন সময়ে এই রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি দেখলে মনে হবে যে তার ভ্রুর বিচিত্র এক পরিবর্তন হচ্ছে। এগুলো ছোট হয়ে আসছে। মনে করা হয়, নিজেকে বাবা কিং জং ইলের মত দেখাতে ইচ্ছে করেই ভ্রু ছোট করছেন উন। এই ব্যাপারে কখনো তিনি রাষ্ট্রীয় বিবৃতি দিয়ে বসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

অবিশ্বাস্য বিলাসবহুল জীবন
- বিদেশ থেকে নিয়ে আসা দামি মদঃ দেশে তৈরি মদ একাধারে সস্তা এবং সুলভ হলেও তা মুখে রোচে না উনের। নেতা এবং তার অভিজাত নিকটজনদের জন্য মদ আমদানি করতে বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয় উত্তর কোরিয়ার কোষাগার থেকে। উনের পছন্দের অ্যালকোহল হুইস্কি এবং কোগন্যাক, তবে তা যেনতেন ব্র্যান্ডের হলে চলবে না। হেনেসির মতো দামী ব্র্যান্ডই চাই তার যেগুলোর প্রতি বোতলের দাম ২ হাজার ডলারেরও বেশি।

- বিদেশ থেকে নিয়ে আসা খাবার-দাবারঃ খাবার-দাবারের বেলায় কোরীয় নেতা কিমের যেন মোঘলাই রুচি। ডেনমার্কের থেকে মানসম্মত পোর্ক, ইরান থেকে ক্যাভিয়ার, চীনা তরমুজ, আর গোমাংস থেকে তৈরি জাপানের অত্যন্ত সুস্বাদু ‘কোবে’ না হলে তার চলে না। কিম এবং তার কাছের লোকদের খাবার-দাবারে বছরে কত খরচ হয়, তা নির্দিষ্ট করে না জানা গেলেও অঙ্কটা মিলিয়নের ঘর ছাড়াবে নিঃসন্দেহে। উত্তর কোরিয়ার সাধারণ জনগণের পরিস্থিতি কিন্তু পুরো উলটো। সরকারের পক্ষ থেকে আসা নামমাত্র রেশনের ওপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ মানুষ। ২০১৫ সালের আগস্টের এক হিসাব অনুযায়ী, খাদ্য হিসাবে প্রতি সাধারণ উত্তর কোরীয় নাগরিকের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ২৫০ গ্রাম শস্যদানা মাত্র। প্রোটিন এবং শুকনো মাছ বা স্কুইডের মতো খাবার অত্যন্ত দুর্লভ। জনগণের প্রায় অধিকাংশই ভয়ানক অপুষ্টির শিকার।

- বাহারি সিগারেটঃ হাতে বিলিয়ন ডলার থাকলে নিশ্চয়ই রাস্তার পাশের সস্তা সিগারেট ফুঁকতে মন চাইবে না আপনার। কিমেরও তাই। বাহারি ফ্রেঞ্চ সিগারেটের পেছনে বিস্তর খরচ করেন তিনি। ফরাসি কোম্পানি দ্য ইয়েভস সেইন্ট লরেন্ট এর বানানো সিগারেটই তার পছন্দ, যার প্রতি পিসের দাম ৪৪ ডলার করে। আর এই সিগারেট বহনের জন্য যেই চামড়ায় তৈরি ব্যাগ, তার দাম ১৪৪ ডলার।

- পছন্দসই বানানো ইয়াটঃ সমুদ্রের বুকে উদ্দাম গতিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটা ইয়াট থাকা আমাদের অনেকের কাছে ঘোড়ারোগ বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু কিম কি আর আমাদের দলে পড়েন! প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিজস্ব ইয়াট নিয়ে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। ডেনিস রডহ্যাম নামের আমেরিকান যে বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সাথে তিনি বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন তিনি, তার বর্ণনামতে, ডিজনি বোট আর ফেরির একটি মিশেল এই ইয়াট।

- নিজস্ব সিনেমা হলঃ সোফা আর টিভি স্ক্রিন নয়, কিম জং উনের সিনেমা দেখার জন্য আছে ১ হাজার আসন বিশিষ্ট আলাদা একটা বিলাসবহুল সিনেমা হলই। আর এর পেছনে ব্যয় হয় কয়েক হাজার ডলার। একদিকে প্রেসিডেন্টের বিলাসবহুল সিনেমা, অন্যদিকে কেবল বেঁচে থাকার জন্য উত্তর কোরীয়দের প্রাণান্ত চেষ্টা। প্রতিদিনকার পেশার বাইরে কারখানায় বা কোনো বিক্রয় কেন্দ্রে কাজ করার জন্য সরকারি অফিসারদের দিতে হয় ঘুষ। এতো পরিশ্রম আর ঘুষ দেয়ার পরেও মাসে আয় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডলারের বেশি ওঠে না।


- ১৭ প্রাসাদের সমাহারঃ কিম জং উন কোথায় থাকেন এর কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়াটা কষ্টকর। কারণ পুরো দেশজুড়ে তার ১৭টা প্রাসাদ তো আছেই, আছে একটা নিজস্ব দ্বীপও। আর বাদবাকি জনসংখ্যার প্রায় সবার বাস ভগ্নদশায় থাকা বাড়িতে, যেগুলোতে হিটিং ব্যবস্থা বা পানির সরবরাহই নেই। পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয় অনেক দূরের জলাধারে, আর ঘর গরম করতে কাঠ কেটে আনা ছাড়া উপায় নাই।

- মিলিয়ন ডলারের ঘড়িঃ ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের তথ্য অনুযায়ী, কিম জং উনের ব্যক্তিগত ঘড়ির সংগ্রহের যে মোট দাম, তা প্রায় ৮.২ মিলিয়ন ডলার।
সশস্ত্র মার্সিডিজঃ দেশের জনরোষ থেকে বাঁচতেই হয়ত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মার্সিডিজে চড়ে রাষ্ট্রীয় সফরে যান কিম। এস৬০০ মডেলের এই গাড়ির মূল্যমান ১.৭ মিলিয়ন ডলার।

- প্রাইভেট রানওয়েঃ নিজস্ব জেট তো আছেই, আরো বিলাসের নির্দশন তৈরি করতে কিম বানিয়ে নিয়েছেন নিজের জন্য আলাদা রানওয়েই। তার প্রায় প্রতিটি প্রাসাদের পাশেই নিজস্ব রানওয়ের ব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে যেসব উত্তর কোরীয়র বাস, তাদের অনেকেরই কোনো মোটরযানে চড়ার কোনো সুযোগ নেই। বাইসাইকেল এবং ঘোড়ায় টানা গাড়িই তাদের ভরসা।
নিজস্ব গলফ কোর্সঃ গলফ খেলার প্রতি তার পিতা কিম জং ইলের যে আকর্ষণ ছিলো, তা থেকে সরে আসেননি কিম জং উন। বর্তমানে নেতার এই শখ পূরণে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে ৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়।
পারিবারিক জীবন
কিম জং-উনের পারিবারিক জীবন অবশ্য ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ। তার স্ত্রী রি সল জু ছিলেন চিয়ারলিডার ও গায়িকা। তবে কবে তাদের বিয়ে হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় নি। এ দম্পতির সন্তান-সন্ততির সংখ্যা যে ঠিক কত সেটাও অনিশ্চয়তায় ভরা। তবে সংখ্যা দুই থেকে তিনের মাঝেই বলা অনুমান সবার।


হেয়ার স্টাইল
কিম জং উনের কেশবিন্যাসে বিচিত্র কিছু নেই। এটা সাদামাটা একটা সামরিক কেশবিন্যাস। ফিউরি সিনেমায় ব্র্যাড পিট কিংবা পৃথিবীর যেকোনো হিপস্টারদের কেশবিন্যাস এমনই হয়।
তারপরও এতে তাঁকে ভুতুড়ে দেখা যায়। কারণ, বিচিত্র এক ঢঙে তিনি ‍চুল আচড়ান। আর গুজব আছে নিজের নাপিতকে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাই নিজের চুল নিজেই কাটেন তিনি।
উল্লেখ্য, তার হেয়ার স্টাইলের নাম - Ambitious



কিম জং উন vs ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের সম্পর্ক অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো। কখনো উপরের দিকে উঠছে তো আবার হঠাৎই নামতে শুরু করে দিল এরকম। গত দু'বছরে এই সম্পর্ক নানান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। এই টানাপড়েনের মধ্যে কখনও ছিল একে অপরকে ক্রুদ্ধ ভাষায় অপমান করা, ব্যাঙ্গ করা, কখনও কখনও ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি আবার কখনও প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথাও। তাদের মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়েছে মোট তিনবার। প্রথমবার সিঙ্গাপুরে যেখানে তাদের 'প্রেম' হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল, তারপর ভিয়েতনামে যেখানে তাদের সাক্ষাৎ মধুর ছিল না, আর সবশেষে তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেখার করার জন্যে কিম জং উনের দেশেই চলে গেলেন।
তাদের এই সম্পর্ককে বলা যেতে পারে শন্ধু (শত্রু+বন্ধু)
তবে এই দুই নেতার সম্পর্কের বেশিরভাগটাই সীমাবদ্ধ ছিল টুইট আর বিবৃতির বাকযুদ্ধের ভেতরে।
মি. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো জায়গায় আক্রমণ করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু ঠিক এক বছর পরেই, ২০১৮ সালে, সিঙ্গাপুরে দুই নেতার পর ঐতিহাসিক বৈঠকের পর মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, "আমরা প্রেমে পড়েছি।" এর পর ভিয়েতনামেও তাদের দেখা হয়। কিন্তু আলোচনায় অগ্রগতি ছাড়াই সেটা ভেঙে যায় তড়িঘড়ি। একসময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, "ক্রোধের আগুনে উত্তর কোরিয়া পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, যা এই পৃথিবী যা কখনো দেখেনি।" মি. কিমকে "রকেট ম্যান" হিসেবে ব্যাঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, "তিনি ‌ও তার সরকার এক আত্মঘাতী মিশনে আছেন।"



এর জবাবে মি. কিম ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছিলেন "ডোটার্ড" যার অর্থ "নির্বোধ বুড়ো।" এর পরপরই উত্তর কোরিয়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। জবাবে আরো কিছু নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি হুমকিও দেয়। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকটি টুইট করেন। মাত্র একদিনেই তিনি উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে করেন কয়েক গুচ্ছ টুইট। মি. কিমকে 'উন্মাদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন যে "উত্তর কোরিয়ার নেতা নিজের লোকদের হত্যা করছে। এর পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে যা আর কখনো হয়নি।" কিন্তু এরকম হুমকিতে পিছু হটেন নি কিম জং আন। বরং তিনি তখন তার ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি প্রদর্শন করেন। পাল্টাপাল্টি এই হুমকি-ধামকির পর নাটকীয়ভাবে অনেক কিছু বদলে যেতে থাকে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক কথা চালাচালি হতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মাধ্যমে। হঠাৎ করেই ঘোষণা করা হলো যে, এই 'চরম শত্রু' বৈঠকে মিলিত হবেন। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সমাবেশে বললেন, জুন মাসের ১২ তারিখে আমরা সিঙ্গাপুরে দেখা করছি। তাদের সাক্ষাৎ হলো। একে অপরের প্রশংসা করলেন। তাদের উষ্ণ করমর্দনের ছবি ছড়িয়ে পড়লো সংবাদ মাধ্যমে ও সোশাল মিডিয়াতে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন, আমরা দারুণ কাজ করছি। আমি খুব কঠোর ছিলাম। তিনিও কঠোর ছিলেন। আমরা এদিকে ওদিকে গেলাম এবং তারপর আমরা প্রেমে পড়ে গেছি। ঠিক আছে? সত্যি আমরা প্রেমে পড়েছি!
আসলে ঐতিহাসিকভাবে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল বৈরীভাবাপন্ন। কিন্তু কিম-ট্রাম্প সম্মেলনের পর উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র কিছু আনুষ্ঠানিক কূটনীতি শুরু করেছে।

উনের বর্বরতা
উত্তর কোরিয়ার এই রাষ্ট্রনেতার বর্বরতা সম্পর্কে অনেক গল্প শোনা যায়। এগুলো ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা তা এক রহস্য।
- একবার জেমস বন্ডের ছবির আদলেই এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে রাক্ষুসে পিরানহা মাছ ভরতি পুকুরে ফেলে নাকি হত্যা করেছেন কিম। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ রিয়ংসং রেসিডেন্সের ভেতরে তৈরি বিশাল আকারের একটি পুকুর রয়েছে। সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তাকে সেই পুকুরের রাক্ষুসে মাছের পেটেই যেতে হলো। অনেকের ধারণা, ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া জেমস বন্ডের ছবি ‘ইউ ওনলি লিভ টোয়াইস’ ছবি থেকেই এই অভিনব হত্যার ছক সাজিয়েছেন কিম।

- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে খুন করা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার বিশেষ দূত কিম হায়োক চোল ও তাঁর সঙ্গী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তাকে।

- ২০১১ সালের আগস্টে কিম ক্ষমতায় এসেই সেনাপ্রধান রি ইয়ং গিলের উপর চড়াও হন। তারই নির্দেশে রি-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই রি দোষী প্রমাণিত হন এবং তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধীকে কখনো ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে ঠেলে দেওয়া, কখনো কামানের তোপে, এমনকি সরাসরি গুলি করে হত্যা করার আদেশ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না তিনি।

- সামরিক বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় তার কাছের পরামর্শক জ্যাং সং-থায়েক বিরুদ্ধে। এই অভিযোগেই প্রাণ যায় তার। তবে এটা ছিলো কেবল শুরু। এরপর কিম জং-উনের নজর পড়ে সং-থায়েকের অনুগতদের দিকে। তাদের অনেককেই চাকরিচ্যুত করা হয়, অনেককে এন্টিএয়ারক্রাফট মেশিনগান দিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

- উত্তর কোরিয়ায় কেউ অপরাধ করলে তিন প্রজন্মকে শাস্তি দেওয়া হয়। দাদা-দাদী, বাবা-মা ও সন্তানকে সেই অপরাধের শাস্তি মাথা পেতে নিতে হয়। কেউ দেশের এমন কঠোর, অবাস্তব আইন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলে তাকেও ভোগ করতে হয় কঠিনতর শাস্তি! মৃত্যুদণ্ড সেখানে প্রায় ডালভাত!

- বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, কিম জং উন নিজে ক্ষমতায় থাকতে সৎভাই কিম জং নামকে গুপ্তহত্যা করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দাদের সন্দেহ, উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচরেরা কিমের নির্দেশে তাঁকে বিমানবন্দরেই বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছে।
তার বাবার শেষকৃত্যে যারা অংশ নেয়নি, তাদের ৬ মাসের সশ্রম কারা দন্ড দিয়েছিলেন উন।
কিছু বিচিত্র তথ্য
- সিনেমার খুবই ভক্ত কিম জং উন। তাঁর কাছে কমপক্ষে ২০ হাজার সিনেমার ডিভিডির কালেকশন রয়েছে। তাঁর প্রিয় দুই ছবি “Rambo” এবং 'গডজিলা'।

- ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কিম জং উন কে নিয়ে “The Interview” নামের একটা সিনেমা বানিয়েছিল। এই সিনেমায় উন কে নেগেটিভ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়েছিল, যদি এই সিনেমা মুক্তি পায় তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা চালাবে। তাই হুমকির মুখে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটির অনেক অংশ বাদ দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

- উত্তর কোরিয়ার আইনে কোনো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে সাবেক রাষ্ট্রনেতা কিম ইল-সাং এবং কিম জং-ইলের ছবি বাঁচানো জাতীয় কর্তব্য। রাষ্ট্রনেতাদের ছবি বাঁচাতে গিয়ে কেউ যদি জীবন খোয়ান, তবে দেশবাসীর চোখে তিনি ‘হিরো’। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বাড়িতে এদের ছবি রাখাও বাধ্যতামূলক। এরা কিম জং উনের পূর্বপুরুষ।

- পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল অনেক কিছুই ঘটিয়েছেন কিম জং উন। এমনই আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, পাঠ্যবইয়ে তার জীবনী যুক্ত করা। এটি একটি মাত্র অধ্যায় নয়, বইজুড়ে ‘বিস্ময়বালক’ কিম জং উনের মাহাত্ম্য। কীভাবে তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে দক্ষ চালক হয়ে উঠেছিলেন, মাত্র নয় বছরে নৌ-প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন এসবের গুণগান সেদেশের শিশুদের অবশ্যপাঠ্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, উনের এই নতুন কৌশলের পেছনে উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে প্রশ্নহীন আনুগত্য তৈরি করা।

- উত্তর কোরিয়ায় মেয়েদের বিখ্যাত ব্যান্ড হল ‘মোরানবঙ’। কথিত আছে, এই ব্যান্ডের জন্য সদস্য খোদ রাষ্ট্রপ্রধানই নির্বাচন করে দেন।

- উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে যে কিমদের মলমূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন পড়ে না। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষও এই কথা বিশ্বাস করেন। উনের বাবা কিং জং ইল নিজের আত্মজীবনীতে এটা লিখে গেছেন। আর একই কথা নাকি উন সহ তাঁর পরিবারের সবার জন্যই সত্য!

- যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও মুহূর্তে ঠোঁটে হাসি থাকে কিম জং উনের। আর ঠোঁটের কোণে এই হাসির মূল কারণ, কিম চান সবাই তাঁকে আমুদে হিসেবেই চিনুক।

- সুইৎজারল্যান্ডে কিমের সহপাঠীরাই জানিয়েছেন যে, বাস্কেটবল খেলতে দারুণ পছন্দ করত তাঁদের বন্ধু। এমনকী বাস্কেটবল তারকা মাইকেল জর্ডানের ছবিও আঁকতেন কিম। ২০১৩ সালে কিম জং উন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যানের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব দ্বীপে দেখা করেন। দু’জনের মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক থাকা সত্ত্বেও দু’জনের চরম সখ্যতা তৈরি হয়।

- গাড়ির প্রতিও প্রচণ্ড শৌখিন কিম। কিমের গ্যারেজে ১০০টি গাড়ি রয়েছে। সব ধরনের বিখ্যাত ছোট-বড় সবরকমের গাড়িই রয়েছে উত্তর কোরিয়ার শাসকের। তবে কিমের সবথেকে পছন্দের গাড়ির ব্র্যান্ড মার্সিডিজ বেঞ্জ।


তথ্যসূত্র-
রিদওয়ান অনিন্দ্য
২য় ব্যাচ, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


Comments