মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র ফিলিস্তিন ( Palestine)
ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন, ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স শহরে নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) ও প্যালেস্টাইন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপাক্ষিক ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল । ১৯৮৮ ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না, যদিও তারা যে অঞ্চলগুলি দাবি করেছিল আন্তর্জাতিকভাবে সেইগুলি ইজরায়েলের দখলে ছিল। আরবরা দাবি করেছি, ১৯৪৭ সালে জাতি সংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন ভূখন্ড (গাজা ভূখন্ড ও ওয়েস্ট ব্যাংক) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধিন অঞ্চলও ছিল এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্টের রাজধানী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
দেশের নাম : ফিলিস্তিন ( Palestine)
ঘোষিত রাজধানী : পূর্ব জেরুজালেম।
প্রশাসনিক কেন্দ্র : (২২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে OIC এর ঘোষণা মতে ফিলিস্তিনের স্থায়ী রাজধানী-'বায়তুল মুকাদ্দাস') _ রামাল্লাহ (Ramallah).
বৃহত্তর শহর : গাজা ভূখন্ড
সরকারি ভাষা : আরবি
সরকার : বিধিসম্মত সংসদীয় গণতন্ত্র ।কার্যরত চিহ্নস্বরূপ একটি আধা-রাষ্ট্রপতি গণতন্ত্র।
রাষ্ট্রপতি : Mahmoud Abbas
প্রধানমন্ত্রী : Mohammad Shtayyeh ( দায়িত্ব গ্রহন, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯)
পার্লামেন্ট স্পিকার : Aziz Dweik
আইনসভা : জাতীয় পরিষদ
স্বাধীনতা ঘোষণা : ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৮
আয়তন : ৬০২০ বর্গকিলোমিটার, ২৩২০ বর্গমাইল।
পানি : ৩.৫%
জনসংখ্যা : ৪৮,১৬,৫০৩ ( ২০১৬, আনুমানিক)
জনসংখ্যার ঘনত্ব : ৮০০, প্রতি বর্গকিলোমিটার।
মুদ্রা : মিশরীয় পাউন্ড (EGP), ইসরায়েলি শেকেল (ILS), জর্দানিয়ান দিনার (JOD)
ঘোষিত রাজধানী : পূর্ব জেরুজালেম।
প্রশাসনিক কেন্দ্র : (২২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে OIC এর ঘোষণা মতে ফিলিস্তিনের স্থায়ী রাজধানী-'বায়তুল মুকাদ্দাস') _ রামাল্লাহ (Ramallah).
বৃহত্তর শহর : গাজা ভূখন্ড
সরকারি ভাষা : আরবি
সরকার : বিধিসম্মত সংসদীয় গণতন্ত্র ।কার্যরত চিহ্নস্বরূপ একটি আধা-রাষ্ট্রপতি গণতন্ত্র।
রাষ্ট্রপতি : Mahmoud Abbas
প্রধানমন্ত্রী : Mohammad Shtayyeh ( দায়িত্ব গ্রহন, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯)
পার্লামেন্ট স্পিকার : Aziz Dweik
আইনসভা : জাতীয় পরিষদ
স্বাধীনতা ঘোষণা : ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৮
আয়তন : ৬০২০ বর্গকিলোমিটার, ২৩২০ বর্গমাইল।
পানি : ৩.৫%
জনসংখ্যা : ৪৮,১৬,৫০৩ ( ২০১৬, আনুমানিক)
জনসংখ্যার ঘনত্ব : ৮০০, প্রতি বর্গকিলোমিটার।
মুদ্রা : মিশরীয় পাউন্ড (EGP), ইসরায়েলি শেকেল (ILS), জর্দানিয়ান দিনার (JOD)
একনজরে ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত (যেখানে বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড অবস্থিত)। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন। এটি ইহুদি ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের জন্মস্থান। ভৌগলিক অবস্থান ও দুটি প্রধান ধর্মের সূতিকাগার হওয়ায় স্বভাবতই ফিলিস্তিন নামক ভূখণ্ডটির রয়েছে ধর্ম, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও রাজনীতির এক দীর্ঘ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইতিহাস। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের এই সম্পূর্ণ ভূ-খণ্ড বা এর কোন কোন অংশ বিভিন্ন রকমের মানুষদের দ্বারা পরিচালিত ও শাসিত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে আছে- কেনানীয়, আমরীয়, প্রাচীন মিশরীয়, ইসরায়েল বংশের ইহুদি, ব্যাবিলনীয়, পারস্য, প্রাচীন গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টাইনীয়, প্রাথমিক যুগের মুসলিম খিলাফাত (যেমনঃ উমাইয়াদ, আব্বাসীয়, সেলজুক, ফাতমি প্রভৃতি), খ্রিস্টান ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ, শেষের দিকের মুসলিম খিলাফাত (যেমনঃ আইয়ুবি, মামলুক, উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রভৃতি), ব্রিটিশ, জর্ডানি (পশিম তীরের অংশটুকু), মিশরীয় (গাজা অঞ্চল), এবং হাল আমলের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সহ এরকম বহু জাতি ও অঞ্চলের ব্যক্তি ও শাসকবর্গ। ফিলিস্তিনের অপরাপর নামগুলো হলোঃ কানান, জায়ন, ইসরায়েলের ভূমি, দক্ষিণ সিরিয়া, জুন্দ ফিলাস্তিন এবং পবিত্র ভূমি।
ফিলিস্তিন অঞ্চলটি পৃথিবীর প্রাচীন অঞ্চলগুলোর একটি যেখানে মানুষের বসবাস, কৃষিনির্ভর জনসমষ্টি এবং সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম ও মধ্যভাগে স্বাধীন কেনানীয় নগর-রাষ্ট্রগুলো গড়ে উঠেছিল এবং প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া, ফোয়েনেশিয়া, মাইনোয়ান ক্রিট, এবং সিরিয়ায় গড়ে ওঠা সভ্যতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিল।
(ইসরাইল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন)
ফিলিস্তিনের রক্তঝরা ইতিহাস
ফিলিস্তিনিরা হতভাগ্যই বটে। তারা প্রায় এক শতক ধরে নিজেদের ভূখণ্ডে দখলদার ইহুদিদের হাতে মার খাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঝরছে রক্ত। লাশের পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে। ফিলিস্তিনিরা আজও মরছে।
ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। আরব মুসলমানেরা ছিল সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। উনিশ শতকের শেষ দিকে জায়নবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইহুদিদের চোখ পড়ে আরব ভূখণ্ডে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। তাদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ে। সবকিছুর উদ্দেশ্য—আরব ভূখণ্ড দখল করে ‘আবাসভূমি’ গড়ে তোলা।
বিশ শতকের শুরুর দিকে অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ইউরোপীয় শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বাড়ায়। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহে নামায় ব্রিটিশ সরকার। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইহুদিদেরও গোপনে আশ্বাস দেওয়া হয়।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ‘ইহুদিদের একটি জাতীয় বাসস্থান’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানায়। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে ফিলিস্তিনির ম্যানডেট পায় ব্রিটিশরা। ফিলিস্তিনে দলে দলে অভিবাসী ইহুদি আসতে থাকে। বিরোধিতা সত্ত্বেও সেখানে তাঁরা বসতি গড়ে তোলে। এরপর ১৯২০, ’২১, ’২৮, ’২৯ ও ’৩৬ সালে আরবদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে ইহুদিদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। সেখানকার ইহুদিরা পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের তত্পরতা আরও বেড়ে যায়। ব্রিটিশ শাসন ও ইহুদি দখলদারির বিরুদ্ধে ১৯৩৬-১৯৩৯ সালে সংঘটিত হয় আরব বিদ্রোহ। ওই বিদ্রোহ দমন করা হয়। নিহত হয় পাঁচ হাজার আরব।
ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। আরব মুসলমানেরা ছিল সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। উনিশ শতকের শেষ দিকে জায়নবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইহুদিদের চোখ পড়ে আরব ভূখণ্ডে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। তাদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ে। সবকিছুর উদ্দেশ্য—আরব ভূখণ্ড দখল করে ‘আবাসভূমি’ গড়ে তোলা।
বিশ শতকের শুরুর দিকে অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ইউরোপীয় শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বাড়ায়। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহে নামায় ব্রিটিশ সরকার। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইহুদিদেরও গোপনে আশ্বাস দেওয়া হয়।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ‘ইহুদিদের একটি জাতীয় বাসস্থান’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানায়। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে ফিলিস্তিনির ম্যানডেট পায় ব্রিটিশরা। ফিলিস্তিনে দলে দলে অভিবাসী ইহুদি আসতে থাকে। বিরোধিতা সত্ত্বেও সেখানে তাঁরা বসতি গড়ে তোলে। এরপর ১৯২০, ’২১, ’২৮, ’২৯ ও ’৩৬ সালে আরবদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে ইহুদিদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। সেখানকার ইহুদিরা পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের তত্পরতা আরও বেড়ে যায়। ব্রিটিশ শাসন ও ইহুদি দখলদারির বিরুদ্ধে ১৯৩৬-১৯৩৯ সালে সংঘটিত হয় আরব বিদ্রোহ। ওই বিদ্রোহ দমন করা হয়। নিহত হয় পাঁচ হাজার আরব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন নিয়ে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে বৈরিতা বেড়ে যায়। ফিলিস্তিনের ওপর ম্যানডেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার। একই সঙ্গে এই ভূ-ভাগ্য নির্ধারণে সদ্যগঠিত জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানো হয়।
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনিকে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। আরবদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিকল্পনাটি এগিয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নীলনকশায় ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনিকে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। আরবদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিকল্পনাটি এগিয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নীলনকশায় ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনির ম্যানডেট ছেড়ে দেয়। ওই দিনই ইহুদি নেতারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। পরদিন আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। উপরন্তু প্রস্তাবিত আরব রাষ্ট্রের একটা বড় অংশ দখল করে ইসরায়েল। সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়।
মিত্রদের সহযোগিতা ও আশকারায় দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে ইসরায়েল। ষাটের দশকে পারমাণবিক বোমার মালিক বনে যায় তারা। দখলদারি ও বর্বরতার ব্যারোমিটার বাড়তে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরায়েলের একগুঁয়েমি ও নৃশংসতায় ফিলিস্তিনে রক্তগঙ্গা বইতে থাকে। আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরও তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
মুক্তির সংগ্রামের লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও)। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাত ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি ফিলিস্তিনের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল ফাতাহরও নেতা ছিলেন।
ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় হামাস। তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক শাখা রয়েছে। কট্টরপন্থী সংগঠনটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না।
ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় হামাস। তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক শাখা রয়েছে। কট্টরপন্থী সংগঠনটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ পর্যন্ত নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। বরং দশকের পর দশক ধরে সেখানে নতুন মাত্রায় সংঘাত জন্ম নিয়েছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় ফিলিস্তিন। এর আগে তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ‘পর্যবেক্ষক ভূখণ্ড’ হিসেবে যোগ দিত। কিন্তু এখন ‘সদস্য নয় এমন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই রায়কে সার্বভৌম ফিলিস্তিনের ‘জন্মসনদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছে। আর কত রক্ত ঝরলে, লাশের মিছিল কতটা দীর্ঘ হলে, তাদের ভূখণ্ড স্বপ্নের স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ধরা দেবে—তা এখনো অজানা।
ইসরাইল - ফিলিস্তিন সমস্যার প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস
ইহুদি দেশ ইসরাইল সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের মিছিল। গাজার মানুষের আর্তনাদ আর হাহাকারে রোজই কাঁপছে ফিলিস্তিনের আকাশ বাতাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতার পাশাপাশি বড়বড় মুসলিম রাষ্ট্র গুলোর নিরবতায় অসহায় হয়ে পরেছে ফিলিস্তিনবাসী।
আমরা অনেকেই জানিনা ফিলিস্তিন ইসরাইলের দ্বন্দ্ব কিভাবে শুরু হয়!
নিচের অংশটুকুতে সেটুকু তুলে ধরা হলো-
নিচের অংশটুকুতে সেটুকু তুলে ধরা হলো-
ইউরোপে যখন হিটলারের ইহুদি নিধন মিশনে হিটলার ইহুদিদের নির্মম ভাবে হত্যা করা শুরু করে তখন অনেক ইহুদি আস্তে আস্তে পালানো শুরু করে। হিটলারের হাতে প্রায় ৬০ লক্ষ্য ইহুদি খুন হলেও আরও হাজার হাজার ইহুদি ইউরোপ থেকে পালাতে সক্ষম হয়। অসহায় এসব ইহুদিদের সাহায্যার্থে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে ফিলিস্তিন নামক এক রাষ্ট্র। কিন্তু কে জানতো মানবতার খাতিরে সাড়া দেয়া এই রাষ্ট্রই একদিন এত অসহায় হয়ে পড়বে! কে জানতো এই জাতিরই একদিন দূর্বিষহ দিন দেখতে হবে!
এরপর আস্তে আস্তে কয়েক হাজার ইহুদি ফিলিস্তিনে বসবাস শুরু করে। দেখতে দেখতে এই সংখ্যা লাখে পরিণত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটেনের প্রয়োজনে দূর্লভ বোমা তৈরির উপকরণ কৃত্রিম ফসফরাস তৈরীতে সক্ষম হন ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান। ফলে আনন্দিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন কি ধরনের পুরষ্কার তিনি চান।
তিনি অর্থ না চেয়ে চাইলেন তার স্বজাতির জন্য এক টুকরো স্বাধীন ভূমি আর তা হবে ফিলিস্তিন।
এর ফলোশ্রুতিতে ফিলিস্তিন ভূখন্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীনে রাখে। মূলত এই সময়টিই ফিলিস্তিন কে আরবশূূন্য করার জন্য কাজে লাগায় ইহুদী বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ- মার্কিন-শক্তি।
তিনি অর্থ না চেয়ে চাইলেন তার স্বজাতির জন্য এক টুকরো স্বাধীন ভূমি আর তা হবে ফিলিস্তিন।
এর ফলোশ্রুতিতে ফিলিস্তিন ভূখন্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীনে রাখে। মূলত এই সময়টিই ফিলিস্তিন কে আরবশূূন্য করার জন্য কাজে লাগায় ইহুদী বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ- মার্কিন-শক্তি।
ব্রিটিশরা একদিকে ইহুদিদের জন্য খুলে দেয় ফিলিস্তিনের দরজা অন্যদিকে ব্রিটিশবাহিনীর সহযোগিতায় ইহুদিরা ফিলিস্তিন দের বিতাড়িত করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য গড়ে তোলে গোপন প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী সংগঠন। তারমধ্যে তিনটি প্রধান সংগঠন ছিলো - হাগানাহ, ইরগ্যুন ও স্ট্যার্নগ্যাং যারা হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষন আর ধ্বংসযঞ্জ সৃষ্টির মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিন দের বাধ্য করে নিজ মাতৃভূূূূমি ছেড়ে যেতে।
সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর গনহত্যার কথা যখন আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচারিত হচ্ছিলো তখন পরিস্থিতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুপ্ত সংগঠন হাগানাহ বেঁছে নেয় আত্নহনন পন্থা।
১৯৪০ সালে এসএস প্যাট্রিয়া নামক একটি জাহাজ কে হাইফা বন্দরে তারা উড়িয়ে দিয়ে ২৭৬ জন ইহুদি কে তারা হত্যা করে। ১৯৪২ সালে আরও একটি জাহাজ উড়িয়ে দিয়ে ৭৬৯ জন ইহুদি হত্যা করে তারা। উভয় জাহাজে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিন আসছিলো, আর ব্রিটিশরা সামরিক কৌশলগত কারণে জাহাজ দুটিকে ফিলিস্তিন বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিলো না।
হাগানাহ এভাবে ইহুদি হত্যা করে বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করলো। পাশাপাশি ইহুদিদের বসতি স্থাপন ও আরবদের উচ্ছেদ করণ চলতে থাকে খুব দ্রুত।
এর ফলে ২০ লাখ জনবসতির মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা দাড়ালো ৫ লাখ ৪০ হাজার।
সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর গনহত্যার কথা যখন আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচারিত হচ্ছিলো তখন পরিস্থিতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুপ্ত সংগঠন হাগানাহ বেঁছে নেয় আত্নহনন পন্থা।
১৯৪০ সালে এসএস প্যাট্রিয়া নামক একটি জাহাজ কে হাইফা বন্দরে তারা উড়িয়ে দিয়ে ২৭৬ জন ইহুদি কে তারা হত্যা করে। ১৯৪২ সালে আরও একটি জাহাজ উড়িয়ে দিয়ে ৭৬৯ জন ইহুদি হত্যা করে তারা। উভয় জাহাজে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিন আসছিলো, আর ব্রিটিশরা সামরিক কৌশলগত কারণে জাহাজ দুটিকে ফিলিস্তিন বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিলো না।
হাগানাহ এভাবে ইহুদি হত্যা করে বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করলো। পাশাপাশি ইহুদিদের বসতি স্থাপন ও আরবদের উচ্ছেদ করণ চলতে থাকে খুব দ্রুত।
এর ফলে ২০ লাখ জনবসতির মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা দাড়ালো ৫ লাখ ৪০ হাজার।
এই সময়ই ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঙ্গ- মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ হয় তাতে ৩৩ টি রাষ্ট্র পক্ষে, ১৩ টি বিপক্ষে এবং ১০ টি ভোট প্রদানে বিরত থাকে।
প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেলো ৫৭% আর ফিলিস্তিনিরা ৪৩%। তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর - পশ্চিম সীমানা ছিলো অনির্ধারিত, ফলে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়াতে পারে। ফলে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হলেও উপেক্ষিত থেকে যায় ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের মাধ্যমে পাশ হয়ে যায় একটি অযৌক্তিক ও অবৈধ প্রস্তাব। প্রহসনের নাটকে জিতে গিয়ে ইহুদিরা হয়ে ওঠে আরও হিংস্র। তারা হত্যা সন্ত্রাসের পাশাপাশি ফিলিস্তিনদের উচ্ছেদ করার জন্য রাতে তাদের ফোনলাইন বিদ্যুত লাইন কাটা, বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোড় করে জমিদখল এবং বিভিন্ন ভাবে নারী নির্যাতন করে মৃত্যু বিভীষিকা সৃষ্টি করতে লাগলো। ফলে লাখ লাখ আরব বাধ্য হলো দেশ ত্যাগ করতে।
এরপর ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২ টায় ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণা করলো ইহুদিরা। ১০ মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলো অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন - বৃটেন। এভাবেই জন্ম নেয় অবৈধ এক রাষ্ট্র ইসরাইল। এরফলে ফিলিস্তিন হারায় তার ভূমি, নিজ দেশে পরাধীন হয় তারা৷
এরপর ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২ টায় ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণা করলো ইহুদিরা। ১০ মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলো অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন - বৃটেন। এভাবেই জন্ম নেয় অবৈধ এক রাষ্ট্র ইসরাইল। এরফলে ফিলিস্তিন হারায় তার ভূমি, নিজ দেশে পরাধীন হয় তারা৷
কিন্তু এরপরও অবৈধ ভাবে ইসরাইল তাদের দখলসীমা বাড়িয়ে নিতে লাগলো। যার ফলে উপেক্ষিত থাকা ফিলিস্তিনের বাকি অংশ নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিন করার ব্যপক প্রয়োজন দেখা দিলো। তারই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন, ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স শহরে নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) ও প্যালেস্টাইন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপাক্ষিক ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল । ১৯৮৮ ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না, যদিও তারা যে অঞ্চলগুলি দাবি করেছিল আন্তর্জাতিকভাবে সেইগুলি ইজরায়েলের দখলে ছিল। আরবরা দাবি করেছি, ১৯৪৭ সালে জাতি সংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন ভূখন্ড (গাজা ভূখন্ড ও ওয়েস্ট ব্যাংক) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধিন অঞ্চলও ছিল এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্টের রাজধানী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
ফিলিস্তিনের প্রধান দুই দল ছিলো ফাতাহ ও হামাস। কিন্তু রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগে। যার ফলে ফিলিস্তিনের প্রধান দুই অংশ ওয়েস্ট ব্যাংক ফাতাস সরকারের অধীনে নিয়ে নেয়। আর অন্যদিকে গাজা ভূখন্ডে হামাস সরকার গঠন করে। কিন্তু এই গাজা ভূখন্ড নিয়ে ইসরাইলের মারপ্যাচ শুরু হয়।
একনজরে গাজা ভূখন্ড
ভূমধ্যসাগরতীরে অবস্থিত একটি বিতর্কিত ভূখণ্ড গাজা। এর ৩২০ কিলোমিটার এলাকা জুরে রয়েছে চারটি শহর, আটটি ফিলিস্তিনি শরনার্থীশিবির, ১১ টি গ্রাম।
গাজা ভূখন্ডের পশ্চিমে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মিশর, এবং উত্তর পূর্বে ও দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে ইসরাইল।
গাজা ভূখন্ডের পশ্চিমে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মিশর, এবং উত্তর পূর্বে ও দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে ইসরাইল।
যদিও জাতিসংঘে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গাজা ভূখন্ডের স্বাধীনতা পুরোপুরি স্বীকৃত নয় এই অঞ্চলটি ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি হামাস সরকারের শাসনে পড়ে।
গাজা ভূখন্ডে ইসরাইল অবৈধ ভাবে প্রভাব খাটানো শুরু করে। ফলে হামাস আর ইসরাইলের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এজন্য আজ পর্যন্ত হামাস আর ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে। এভাবে ইসরাইল অবৈধভাবে গাজায় তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজা ভূখন্ডে ইসরাইল অবৈধ ভাবে প্রভাব খাটানো শুরু করে। ফলে হামাস আর ইসরাইলের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এজন্য আজ পর্যন্ত হামাস আর ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে। এভাবে ইসরাইল অবৈধভাবে গাজায় তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল
ফাতাহ (আরবি: فتح) ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে গঠিত দল। মাহমুদ আব্বাস, সালাহ খালাফ, খালিল আল ওয়াজির, আহমদ শাকির, নায়েফ হাওয়াতমেহ এবং আবদুল মোহসেন আবু মাইজার দলটির প্রথম প্রজন্মের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।
ফিলিস্তিন সংকট ও বর্তমান প্রসঙ্গ
ফিলিস্তিনসহ কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সম্প্রতি তার পুনরাবৃত্তি ঘটল আরেকবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে। ইরাক ও সিরিয়ার তথাকথিত গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাতের আড়ালে ফিলিস্তিনে নির্যাতন, নিপীড়ন ও রক্তপাত কখনো বন্ধ হয়নি। ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনে ভূমি দখল এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হত্যা রক্তপাত প্রতিদিন রুটিন কর্মসূচি হিসেবে ইসরায়েলিরা ঘটিয়ে চলেছে। যে বিশ্ব সব সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার ছিল আজ জরুরি হয়ে পড়েছে তাকে আবার জাগ্রত করা।
৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাত চলে আসছে, তার অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে মানা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। একমাত্র যে দেশ ইসরায়েলের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারে সক্ষম, সে হলো এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশ কৌশলগত মৈত্রীতে আবদ্ধ। এই দুই দেশে সরকার বদল হয়, নতুন নেতা আসেন, কিন্তু তাদের কৌশলগত আঁতাতের কোনো পরিবর্তন হয় না। যুক্তরাষ্ট্র বরাবর নিজেকে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার নিরপেক্ষ ‘সমঝোতাকারী’ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষতার অর্থ আগে ইসরায়েলের স্বার্থ, তারপর অন্য কথা। অনেকেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই একপেশে নীতি তার নিজের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বব গেইটস সরাসরিই বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ভেতর যে মার্কিনবিরোধী মনোভাব, তার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। তা সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তিত হওয়ার লক্ষণ নেই। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দোকানদারি করে বেড়ানো এই রাষ্ট্রটির অবস্থানও সব সময় এ সঙ্গে স্ববিরোধী। ট্রাম্প মুখে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে মহান শান্তিচুক্তি করাতে চায়। অথচ কাজটা ঠিক উল্টো। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি সেই বিপরীত মনোভাব স্পষ্ট করে। যদিও ট্রাম্পের এই সমর্থনে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রের সমর্থন নেই। ইইউ, রাশিয়া, চীন ইরান তো নয়, এমনকি সম্প্রতি ভারতও একে সমর্থন করেনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে গাজায় গণহত্যাকে সমর্থনযোগ্য না বলে উল্লেখ করেও ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় বলে সাফাইও গান। যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলকে প্রতি বছর তিন বিলিয়ন ডলার সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে থাকে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো মুভমেন্ট ঠেকাতেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সহায়তা করেছে এমন অভিযোগ পুরনো।
১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স শহরে নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে ফিলিস্তিন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) ও ফিলিস্তিন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপক্ষীয় ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। আমরা সবাই সংগ্রামী ফিলিস্তিনের নেতা ও ইয়াসির আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা জর্জ হাবাসের কথা জানি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম ছিল না। এটা ছিল ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম। ১৯৮৮ ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না, যদিও তারা যে অঞ্চলগুলো দাবি করেছিল, বাস্তবে সেগুলো ইসরায়েলের দখলে ছিল। আরবরা দাবি করেছিল, ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন ভূখ- (গাজা ভূখ- ও ওয়েস্ট ব্যাংক) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধীন অঞ্চলও ছিল এর অন্তর্ভুক্ত এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্ট্রের রাজধানী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। জাতিসংঘ এখনো ফিলিস্তিনকে প্রতীকী ও ভবিষ্যতের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করে।
১৯৭৪ আরব লীগ শীর্ষ বৈঠকে স্থির হয়েছিল, পিএলও ফিলিস্তিনের জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি এবং ও তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠিত আহ্বান জানিয়েছিল। ২২ নভেম্বর ১৯৭৪, থেকে ফিলিস্তিন ও পিএলওকে ‘রাষ্ট্রহীন-সত্তা’ রূপে পর্যবেক্ষক অবস্থায় রাখা হয়েছে। যারা শুধু জাতিসংঘে তাদের বক্তব্য রাখতে পারেন, কিন্তু ভোট দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। দল ছিল ফাতাহ ও হামাস। কিন্তু রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে ও ক্ষমতা নিয়ে হামাস ও ফাতাহ এর মধ্যে বিরোধ হয়। যার ফলে ফিলিস্তিনের প্রধান দুই অংশ ওয়েস্ট ব্যাংক ফাতাহ সরকারের অধীনে নিয়ে নেয়। আর অন্যদিকে গাজা ভূখ-ে হামাস সরকার গঠন করে। হামাসকে ঘিরেই গাজায় সংকট তৈরি করে ইসরায়েল। ইয়াসির আরাফাত চরম সংকটময় অবস্থায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। চেষ্টা করেন দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। দখলদারি ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রামের লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। ১৯৬৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাত ছিলেন এ সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি ফিলিস্তিনের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল ফাতাহরও নেতা ছিলেন। ১৯৯১, ১৯৯৩ ও ২০০০ সালে আরাফাত ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রয়াস নেন। যদিও রাজনৈতিক দল হামাস শুরু থেকে তার এই শান্তিপূর্ণ মনোভাবের বিরোধিতা করে। ২০০৪ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দ্বারা গৃহবন্দি অবস্থায় ইয়াসির আরাফাতের রহস্যময় মৃত্যু ঘটে। বলা হয়, তাকে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পুনঃতদন্ত শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ প্রভাবে তাদের অন্যতম মিত্র ফ্রান্স তা মাঝপথে তদন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।
১৯৮৭ সালে ওই সময় একের পর এক ইসরায়েলি সহিংসতার বিরুদ্ধে তৎকালীন ফাতাহ সরকারের মনোভাব ছিল রক্ষণশীল। অস্ত্রের জবাব অস্ত্রের মাধ্যমে না দিয়ে তারা চাইছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে। ফাতাহ সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ইসরায়েলকে সশস্ত্র জবাব দিতে হামাস গঠন করা হয়। হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। প্রথমত, এর সামরিক শাখার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক শাখা রয়েছে। ২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যুর পর হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। সাম্প্রতিক সময় যখন আবার এই দুই পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে চাপ তৈরি করে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটের আরেকটি বড় উপাদান ইরানের সঙ্গে করা ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। ট্রাম্পের ইরান চুক্তি বর্জনের সিদ্ধান্তকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছে ইসরায়েল, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ তিনটি দেশই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র ইরানের ঘোরবিরোধী। তবে বাকি বিশ্ব এই চুক্তির পক্ষে। লক্ষণীয় হলো মুসলিম রাষ্ট্র হলেও সৌদি আরব এ অঞ্চলে বরাবরই ইসরায়েল-মার্কিন স্বার্থে পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আরব-ইসরায়েল সংকট, আইএসের উত্থান, সিরিয়ায় বিদ্রোহ, ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয়, অভিবাসন ইস্যুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যখন মধ্যপ্রাচ্য টালমাটাল, তখনো সৌদি আরব নির্দ্বিধায় মার্কিন স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাতার সংকট ডেকে আনে। যার মাশুল এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্যকে গুনতে হচ্ছে তা-ই নয়, সৌদি আরবের মার্কিন-ইসরায়েলের এই সখ্য সমগ্র আরবের জনগণই নয় বরং বিশ্বকেই সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সিরিয়া সংকট মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাকে নিঃসন্দেহে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও সেই যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের ত্রিভূজ বিদ্যমান। রাশিয়া সরাসরি সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের আগ পর্যন্ত এ সংকট সুরাহার পথে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবারও প্রয়োজন বোধ করেনি। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর ঘটনার পর থেকে যা যা ঘটেছে, তাকে আগামী বিশ্বের সামরিক লড়াইয়ের জোটদের মহড়া বললেও ভুল হবে না।
এ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে বিশ্বের কোনোখানেই এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ শান্তির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না। বরং বিদ্যমান সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলছে। যার অর্থ হলো, বিশ্বকে আরো একটা মহাযুদ্ধের মুখোমুখি করার পরিকল্পনায় নেমেছে তারা। আর কে না জানে, এবারের যুদ্ধ শুরু হলে তা পারমাণবিক আঘাত-পাল্টা আঘাতের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকেই অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দেবে। তাই আজ আমাদের মতো দেশের বৈদেশিক নীতি ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দাবি করে।
লেখক -
রিফাত সিনথীয়া
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়






Comments
Post a Comment